পাঁচ কারাগারে চরম বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহ করে ২২৪০ বন্দী পালিয়ে যান।
দুই কারাগার থেকে ৯৪টি শটগান ও চায়নিজ রাইফেল লুট। ২০ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি।
কারাগারের অফিসের অনলাইন সিস্টেম ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে।
ছিনতাইকারী রাসেল মিয়া ওরফে জুয়েল ও তাঁর সহযোগীরা ৯ বছর আগে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চলন্ত একটি ট্রেনে ছিনতাই করতে গিয়ে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেন। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ওই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় রাসেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই বছরের ১৬ নভেম্বর রাসেল ও তাঁর সহযোগীদের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।
এর পর থেকে রাসেল গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়ে যান রাসেল। আট মাস পর গত ২৬ জুন ঝিনাইদহের মহেশপুরের জলিলপুর বাজারে অভিযান চালিয়ে রাসেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক ঘটনাবলিতে রাসেলের মতো পালিয়ে যাওয়া ১ হাজার ৫২০ বন্দীকে কারাগারগুলোতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ফিরিয়ে আনাদের মধ্যে ১ হাজার ১৩০ জনের জামিন হয়েছে। এখনো ৭২১ বন্দী পলাতক। এ ছাড়া দেশের পাঁচ কারাগার থেকে খোয়া যাওয়া ২০ আগ্নেয়াস্ত্র (চায়নিজ রাইফেল ও শটগান) এখনো উদ্ধার করা যায়নি।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে পালিয়ে যাওয়া দুর্ধর্ষ বন্দীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ হতে পারেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্ধর্ষ বন্দীরা বাইরে থেকে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করতে পারেন, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ হতে পারে।
কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে ও পরে দেশের কয়েকটি কারাগারে বন্দীরা বিশৃঙ্খলা করেন। এ সময় দেশের পাঁচ কারাগারে চরম বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহ করে ২ হাজার ২৪০ বন্দী পালিয়ে যান। হামলাকারীরা কারাগার থেকে ৯৪টি শটগান ও চায়নিজ রাইফেল লুট করেন। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ছয় বন্দী মারা যান। পলাতক বন্দীদের মধ্যে জঙ্গি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, যাবজ্জীবন, বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়াসহ বিচারাধীন মামলার আসামি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ২০৩ জন। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে।
কারা অধিদপ্তরের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পলাতক বন্দীদের খুঁজে পাচ্ছে না। ধারণা করা হয়েছে, তাঁরা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই হাজার হাজার লোক ফটক ভেঙে নরসিংদী জেলা কারাগারে ঢুকে পড়েন। তাঁরা কারাগারের সেলগুলো খুলে দেন এবং
আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ বন্দী পালিয়ে যান।
কারাগারটির জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. শামীম ইকবাল বলেন, ঘটনার পর প্রশাসন ঘোষণা করে, যাঁরা আত্মসমর্পণ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না। তখন ৬৪৬ বন্দী আত্মসমর্পণ করেন। এ ছাড়া ৩ জঙ্গিসহ ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখনো ১৪২ বন্দী পলাতক।