ছেলে স্কুল থেকে ফিরে ভাত খাবে, তাই বাসায় রান্না করছিলেন জুলেখা বেগম। হঠাৎ তাঁর মুঠোফোনে কল আসে। জানতে পারেন ছেলের স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যান। সেখানে গিয়ে জুলেখা জানতে পারেন, ছেলেকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ ছেলে আবদুল্লাহ ছামীমকে দেখতে পান। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে আবদুল্লাহ ছামীম (১২) নিহত হয়েছে। সে ওই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। গতকালের ওই ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ২৭–এ পৌঁছেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৭৮ জন।
ছামীম শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএমখালী মাঝিকান্দি এলাকার মৃত আবুল কালাম আজাদের ছেলে। মা ও ভাই–বোনের সঙ্গে সে উত্তরায় থাকত। আজ মঙ্গলবার সকালে গ্রামের বাড়িতে বাবার কবরের পাশে ছামীমকে দাফন করা হয়েছে।
আজ সকালে ডিএমখালীতে ছামীমের মরদেহ আনার পর শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর মা জুলেখা বেগম বারবার আর্তনাদ করছিলেন, আর বলছিলেন, ‘ছামীম চলে গেল, কিছু বলে গেল না। সাত মাস আগে ওর বাবা মারা গেল, তা–ও কিছু বলে গেল না। আমি কীভাবে এই শোক ভুলব? আমি কাকে মাছ-মাংস দিয়ে ভাত খাওয়াব?’ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবুল কালাম আজাদ পরিবার নিয়ে সৌদি আরবে থাকতেন। তিন বছর আগে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে দেশে চলে আসেন। ঢাকার উত্তরায় বাড়ি বানিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন। আবুল কালাম সৌদি আরবে ব্যবসা করতেন। গত বছর ডিসেম্বরে অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান। পরিবারের সদস্যরা জানুয়ারিতে তাঁর মরদেহ গ্রামে এনে দাফন করেন। মা ও ভাই-বোনের সঙ্গে ছামীম ঢাকার উত্তরা এলাকায় থাকত। গতকাল সকালে তাদের গাড়িতে চড়ে স্কুলে যায়। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় সে শ্রেণিকক্ষে ছিল। তাঁকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।