গার্মেন্টসও শিল্প-কারখানা ডেস্ক, আজনিউজ২৪: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ক্ষতি মোকাবেলায় এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজের ছাড় হওয়া অর্থের একটা অংশ ‘অনুদান’ হিসেবে চান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)।
গতকাল রবিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও এফবিসিসিআইয়ের যৌথভাবে আয়োজিত ৪১তম পরামর্শ সভায় এই প্রস্তাব করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। ভার্চুয়াল এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, “মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ যদি আগামী চার মাস চলতে থাকে। তাহলে এ দেশের ছোট-বড় শিল্প মালিকরা বিপাকে পড়তে পারেন। তাই ক্ষতি মোকাবেলায় প্রণোদনার ছাড় করা অর্থের একটা অংশ ‘অনুদান’ হিসেবে দেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে বৃহৎ শিল্প মালিকদের জন্য দেওয়া প্রণোদনার ছাড় করা অর্থের ৫ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ অনুদানে রূপান্তর করা উচিত।” এ ছাড়া কৃষি খাতে যেসব প্রতিষ্ঠান প্রণোদনার অর্থ পেয়েছে, তাদেরও ৫০ শতাংশ অর্থ অনুদান হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
২০২০ সালে মোট এক লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এই অর্থের বেশির ভাগই ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। করোনার ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে ফের ব্যবসা ও দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আসন্ন বাজেটে সহজ শর্তে ব্যবসা করতে চান ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে তাঁরা বলছেন এটিএ কর বাতিলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর কমানোর কথা।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, রপ্তানিতে স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত পণ্য ও সেবায় ভ্যাট মওকুফ ও রিটার্ন দাখিলের অব্যাহতি চেয়েছেন। এ ছাড়া রপ্তানিতে উৎসে কর আছে ০.৫ থেকে ০.২৫ শতাংশ করা এবং এটা আগামী পাঁচ বছরের জন্য কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সভায় বিটিএমএ সভাপতি মো. আলী খোকন বলেন, ‘সব ধরনের সুতায় প্রতি কেজি ভ্যাট তিন টাকা করার দাবি জানিয়েছেন। বর্তমানে কটন সুতায় তিন টাকা এবং অন্য সুতায় ভ্যাট দিতে হয় ছয় টাকা। এ ছাড়া রপ্তানিতে উৎসে কর আছে ০.৫০ থেকে ০.২৫ শতাংশ করে এবং ক্যাপিটাল মেশিনারির আমদানি কর ১ শতাংশ হলেও এর খুচরা যন্ত্রাংশের জন্য ৩৪ থেকে ১০৪ শতাংশ আছে। খুচরা যন্ত্রাংশেও ১ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের যে কৃষি ব্যবসার খাতগুলো আছে সেখানে যদি ২ শতাংশ করে এআইটি থাকে তাহলে তা খুব ব্যয়বহুল। এ ছাড়া এই খাতে ৫ শতাংশ পর্যন্ত উৎসে কর থাকে, যা খুবই ব্যয়বহুল। আমরা মুড়িতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিচ্ছি এটি যদি আমাদের কনসিডার করা যায় তাহলে খুব ভালো হয়।’
বাংলাদেশ টিভি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এ রাজ্জাক খান বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে এসি আর রেফ্রিজারেটরে ভ্যাট অব্যাহতি পেয়েছি, যা এই জুনে শেষ হবে। এই সেক্টরে অব্যাহতি সময় যেন বাড়ানো হয়।’
আলোচনাসভায় বেসিস সভাপতি আলমাস কবীর বলেন, ‘সফটওয়্যার সেবার ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর সাড়ে ৪ শতাংশ আছে সেটি আমরা সম্পূর্ণ রূপে বাতিল করার অনুরোধ জানাচ্ছি। এ ছাড়া ফায়ারওয়ালসহ এ জাতীয় সফটওয়্যার থেকে সব কর বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।’
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ‘আমরা এনবিআরকে মূলত বলতে চাচ্ছি, আমাদের এই ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ীদের কথা—যাঁদের বার্ষিক ট্রানজেকশন এক কোটি টাকার নিচে, তাঁদের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনের সীমারেখা খুব জরুরি, সেদিকে নজর দেওয়ার কথা।’
উত্তরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের একটি এসআরও আছে ১৮৬ এর ২০০৯ এ যেখানে বলা হয়েছে, মোট মুনাফার ১০ শতাংশ শেয়ারে ইনভেস্ট করতে হবে এবং এক বছরের মধ্যে বাকি ২০ শতাংশ ইনভেস্ট করতে হবে নিজস্ব কারখানা বা অন্য কারখানায়। আমাদের অনুরোধ ছিল এই ২০ শতাংশ ইনভেস্ট কমিয়ে ১০ শতাংশে আনা হোক আর আমাদের কমপক্ষে পাঁচ বছর সময় দেওয়া হোক।’
এ সময় সিলেট মেট্রোপলিটন কমার্সের প্রেসিডেন্ট আফজাল রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘এখানে চাহিদার তুলনায় চায়ের উত্পাদন বেশি, কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চায়ের বাজার নষ্ট করার জন্য চা আমদানি করে। এটা বন্ধ করার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’
সূ্ত্র: কালের কণ্ঠ