ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন না দিতে ছাত্রদলের হট্টগোল ও উপাচার্যকে হেনস্তার প্রতিবাদ এবং দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (০২ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি হলপাড়া থেকে শুরু করে ভিসি চত্বরে গিয়ে সমাপ্ত হয়। এসময় বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিলে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
এসময় শিক্ষার্থীরা এক-দুই, তিন-চার, ডাকসু আমার অধিকার, ডাকসু আমার অধিকার, রুখে দিবে সাধ্য কার, টেম্পু না ডাকসু, ডাকসু ডাকসু, ডাকসু চায় না যারা, শিক্ষার্থীদের শত্রু তারা, গণরুম না ডাকসু, ডাকসু ডাকসু ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রদল যদি প্রশাসনের বিরুদ্ধে যায় তাহলে আমরাও ছাত্রদলের বিরুদ্ধে যাব। ডাকসু, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার অন্যতম প্লাটফর্ম। যে ছাত্রসংগঠন ডাকসুর বিরোধিতা করবে আমরা তার বিরোধিতা করবো। আমরা পুনরায় গেস্টরুম-গণরুম চাই না। অবিলম্বে ডাকসু চাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সমন্বয়ক তাহমীদ আল মুদ্দাসির বলেন, ২০১৯ সালে ডাকসু হওয়াতে শিক্ষার্থীরা সাময়িকভাবে হলেও গণতান্ত্রিক অধিকার পেয়েছিলো। এখন স্বাধীন বাংলাদেশ একদল ডাকসুর বিরোধিতা করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন। এখানে ছাত্রলীগের মতো দানবের কবর রচিত রয়েছে, যদি ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা করে তাহলে তাদেরও কবর রচিত হবে। ছাত্রদলকে বলবো আপনারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে না গিয়ে তাদের ম্যান্ডেট নিয়ে রাজনীতি করেন। অবিলম্বে ডাকসুর রোড ম্যাপ চাই, ডাকসু বাস্তবায়নে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
সহ-সমন্বয়ক মোসাদ্দেক ইবনে আলী মোহাম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কোনো একক ব্যক্তি নয়, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। যারা যারা ভিসিকে হেনস্তা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের রোড ম্যাপ দিতে হবে।
সহ-সমন্বয়ক এবি জুবায়ের বলেন, আজ সন্ধ্যায় আমরা আওয়ামী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলাম। ছাত্রদলের ভাইয়েরাও আওয়ামী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন। কিন্তু যখনই আমরা বলললাম ডাকসু চাই পেছনে দেখি ভাইরা নাই। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে কোনো দানব দেখতে চায় না। অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুস্থ নিরাপদ রাজনীতি চর্চার বন্দোবস্ত করে দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ডাকসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি দেওয়া নিয়ে তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলার মত কোন প্লাটফর্ম নাই। কিন্তু শিক্ষকদের এবং কর্মচারীদের দাবি দেওয়া নিয়ে কথা বলার জন্য প্ল্যাটফর্ম আছে। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের চাওয়া পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাণের দাবি ডাকসুর জন্য বারবার দাবি জানিয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন,জুলাই মাসে যে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার প্রথমে শুরু করার জন্য থাকলেও পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা দাসত্ব থেকে বের হতে একশন নেন। তারা এই কাজে সফল হলে তাদের দাবিদার পূরণের জন্য একমাত্র প্ল্যাটফর্ম ডাকসু ফিরিয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবী জানাচ্ছেন। এখন যখন ডাকসু ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কথা হচ্ছে তখন একটি কুচক্রী মহল শিক্ষার্থীদের আবার দাসত্বে ফিরিয়ে নিতে চায়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। তারা শিক্ষককে হেনস্তা করে, প্রশাসনকে হেনস্তা করে। এই ডাকসু দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী খুবই ফেটে পড়ে। আমরা যারা আছি তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই প্রাণেরর দাবির সাথে সমর্থন প্রকাশ করছি।