ছাত্রজীবন শুধু বই–পড়াশোনা, ক্লাস–পরীক্ষা আর ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সময় বদলেছে, আর শিক্ষার্থীরাও এখন পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তব অভিজ্ঞতা, উদ্যোক্তা দক্ষতা ও অতিরিক্ত আয় সৃষ্টির পথে এগোচ্ছেন। বিশেষ করে ডিজিটাল মাধ্যম, ই–কমার্স ও সেবা-ভিত্তিক ব্যবসার বিস্তারে ছাত্রজীবনেই ছোট ব্যবসা শুরু করা এখন অনেক সহজ। কম পুঁজি দিয়েও এগুলো ভবিষ্যতে বড় ব্যবসায় রূপ নিতে পারে।
নিচে তুলে ধরা হলো ছাত্রজীবনে শুরু করার মতো ৮টি ছোট ব্যবসা:
১. অনলাইন রিসেলিং বা ছোট ই–কমার্স ব্যবসা
ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে নিজের একটি পেজ খুলে পণ্য বিক্রি করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। পোশাক, কসমেটিকস, বই, গ্যাজেট বা হ্যান্ডমেড সামগ্রী—যেকোনো কিছু দিয়ে শুরু করা যায়। ড্রপশিপিং মডেল থাকলে পণ্য নিজের কাছে রাখার প্রয়োজন হয় না, ফলে বিনিয়োগ ঝুঁকি খুব কম।
২. টিউশন বা ছোট টিউশন সেন্টার
শিক্ষার্থীরা দুই–তিনজন মিলে ছোট ‘টিউশন সেন্টার’ বা কোচিং ক্লাস চালাতে পারেন। এতে আয়ের সম্ভাবনা বাড়ে এবং নিজের বিষয়বস্তুর দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়।
৩. গ্রাফিক ডিজাইন ও ডিজিটাল সার্ভিস ব্যবসা
গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, মোশন গ্রাফিক্স বা সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট—এসব স্কিল শিখে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়া সহজ। বিশ্ববিদ্যালয় পাশে ছোট স্টুডিও খুলেও ডিজাইন–প্রিন্টিং সার্ভিস শুরু করা যায়।
৪. কন্টেন্ট ক্রিয়েশন ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবসা
ইউটিউব, ফেসবুক বা টিকটকে নিয়মিত তথ্যবহুল বা বিনোদনধর্মী কন্টেন্ট তৈরি করে অনেক শিক্ষার্থী উল্লেখযোগ্য আয় করছেন। ব্র্যান্ড স্পনসরশিপ, অ্যাডস রেভিনিউ এবং প্রোডাক্ট প্রমোশনের মাধ্যমে এটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায় পরিণত হতে পারে।
৫. ফুড বেইজড মাইক্রো বিজনেস
কেক, বেকারি আইটেম, বাসায় তৈরি খাবার বা স্ন্যাক্স বিশ্ববিদ্যালয়পাড়ায় সবসময় চাহিদা থাকে। ছোট একটি কিচেন, ভালো প্যাকেজিং ও অনলাইন অর্ডার ডেলিভারি দিয়েই শুরু করা যায়।
৬. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও ফটোগ্রাফি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনার, ওরিয়েন্টেশন, ক্লাব ফেস্ট বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করা শিক্ষার্থীদের জন্য লাভজনক ব্যবসা। ফটোগ্রাফি ও ভিডিও কভারেজ যুক্ত করলে আয় আরও বৃদ্ধি পায়।
৭. অ্যাপ–ভিত্তিক বা ক্যাম্পাস সার্ভিস ব্যবসা
ক্যাম্পাসে স্টেশনারি, প্রিন্টিং, লজিস্টিক, নোট–সরবরাহ বা মেস–খাবার ডেলিভারি—এসব সেবা দিয়েও আয় করা যায়। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র–ছাত্রীরাই ক্যাম্পাস ডেলিভারি অ্যাপ চালাচ্ছেন।
৮. লেখালেখি, অনুবাদ ও একাডেমিক সার্ভিস
ব্লগ, নিউজ বা কনটেন্ট রাইটিং, অনুবাদ, এসাইনমেন্ট গাইডলাইন বা থিসিস প্রুফরিডিং—এসব দক্ষতা থাকলে ফ্রিল্যান্স কাজ সহজেই পাওয়া যায়। পড়াশোনার ক্ষতি ছাড়াই সময়মতো কাজ বেছে নেওয়া যায়।
ছাত্রজীবনে ব্যবসা শুরু করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ঝুঁকি কম, শেখার সুযোগ বেশি এবং উদ্যোক্তা মানসিকতা দ্রুত তৈরি হয়। বহু সফল উদ্যোক্তা তাদের যাত্রা শুরু করেছিলেন ঠিক এমন ছোট উদ্যোগ দিয়ে। দক্ষতা, সময় ব্যবস্থাপনা ও সামান্য সৃজনশীলতা থাকলেই যে কেউ ছাত্রজীবনেই সফল ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

