সিলেটের জৈন্তাপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের ওপর চোরাকারবারিদের হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিজিবির নায়েক শামীম আহমদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।
এদিকে চোরাকারবারিদের হামলা ঠেকাতে গুলি ছোড়েন বিজিবির সদস্যরা। এ সময় আলমাস উদ্দিন (২৩) নামের এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। বিজিবির করা মামলায় একজনের নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
গতকাল বুধবার সকালে জৈন্তাপুরের চারিকাটায় চোরাকারবারিদের হামলা ঠেকাতে গুলি চালান বিজিবি সদস্যরা। তখন ওই পথ দিয়ে কাজে যাওয়ার সময় আলমাস উদ্দিন নিহত হন বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। তিনি জৈন্তাপুরের চারিকাটা ইউনিয়নের নয়াখেল পূর্ব গ্রামের শরিফ উদ্দিনের ছেলে। স্বজনেরা জানান, বিজিবির গুলিতে আলমাস মারা যান। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে। তবে আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি।
বিজিবির মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বুধবার বিজিবি সদস্যরা চোরাচালান প্রতিরোধে অভিযান চালান। এ সময় চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি গাড়ি আটক করে নিয়ে আসার সময় চোরাচালানকারিদের সহযোগীরা বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলা করেন। তখন নিজেদের নিরাপত্তা ও সরকারি জানমাল রক্ষার্থে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন বিজিবি সদস্যরা। এ সময় হামলাকারীদের হামলায় এক বিজিবি সদস্য আহত হন।
নিহত ব্যক্তির চাচাতো ভাই মাসুক আহমদ বলেন, পরিবারের মধ্যে আলমাসই একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। বুধবার সকালে কাজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর আহত অবস্থায় সড়কে পড়ে থাকার খবর পেয়ে স্বজনেরা গিয়ে উদ্ধার করেন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বিজিবির চোরাচালানের মালামাল পরিবহন করা গাড়িতে আলমাস ছিলেন না। তিনি সড়ক দিয়ে হাঁটছিলেন। এ সময় বিজিবির ছোড়া গুলিতে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় পরিবারের অভিভাবকসহ এলাকার মুরব্বিদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা করা হবে।
এদিকে ঘটনার পর গতকাল সন্ধ্যায় বিজিবির পক্ষ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জুবায়ের আনোয়ার উল্লেখ করেন, চোরাচালানের মালামাল আটক করায় চোরাকারবারিরা হামলা চালায় ও মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা সরকারি সম্পদ (অস্ত্র ও গোলাবারুদ) ও টহল দলের সদস্যদের জানমাল রক্ষার্থে নিরুপায় হয়ে ৪-৫টি ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে বিজ্ঞপ্তিতে নিহত ব্যক্তির ব্যাপারে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জুবায়ের আনোয়ার জানিয়েছিলেন, চোরাকারবারিদের হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে বিজিবি সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এ সময় একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। নিহত ব্যক্তির বিষয়ে বিজিবি তদন্ত করছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে আজ বেলা পৌনে দুইটার দিকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জুবায়ের আনোয়ারের সঙ্গে কথা বললে তিনি মামলা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে একটি জরুরি ফোন আসার কথা বলে ফোন কেটে দেন। এরপর কয়েক দফা যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, আজ দুপুরে আলমাসের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকে একটি মামলা হয়েছে। তবে নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা হয়নি। নিহত ব্যক্তির লাশ দাফনের পর পরিবার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে।