দেখতে অনেকটাই মশার মতো, আকারে ছোট, চোখে পড়ার মতো নয়। কিন্তু বাস্তবে এটি একটি ভয়াবহ সামরিক প্রযুক্তি। চীনের গবেষণাগারে উদ্ভাবিত এই ড্রোনটি শত্রু পক্ষের কণ্ঠ ও গতিবিধি গোপনে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। হুনান প্রদেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স টেকনোলজি-এর গবেষকরা তৈরি করেছেন এই নতুন মাইক্রোড্রোন, যা সামরিক প্রযুক্তিতে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
নিউইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই মশা আকৃতির ড্রোনটি এতটাই ছোট যে খালি চোখে তা দেখা প্রায় অসম্ভব। এর দেহ পাতার মতো আকৃতির, রঙ কালো এবং আকারে লম্বাটে। ড্রোনটির তিনটি পা আছে যা এতটাই সূক্ষ্ম যে দেখতে অনেকটা মানুষের চুলের মতো।
এই নতুন মাইক্রোড্রোন তৈরি হয়েছে বায়োনিক প্রযুক্তিতে। এটি গোপন নজরদারি ও বিশেষ সামরিক অভিযানে ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। গবেষকদের মতে, ড্রোনটির দৈর্ঘ্য মাত্র ২ সেন্টিমিটার এবং ওজন মাত্র ০.৩ গ্রাম। এটি প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ বারের বেশি ডানা ঝাপটাতে সক্ষম। এতে রয়েছে একটি ক্ষুদ্র ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোন, যার মাধ্যমে গোপনে ছবি, শব্দ এবং বৈদ্যুতিক সংকেত সংগ্রহ করা সম্ভব।
এই ড্রোনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এর আকার এতটাই ক্ষুদ্র যে এটি সাধারণ রাডারে ধরা পড়ে না। ফলে এটি এমন অনেক জায়গায় কাজ করতে সক্ষম যেখানে প্রচলিত বড় আকারের ড্রোন প্রবেশ করতে পারে না। স্মার্টফোনের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত এই ড্রোন কার্যত হয়ে উঠেছে এক নিখুঁত নজরদারি যন্ত্র।
তবে এটি পৃথিবীর প্রথম মাইক্রোড্রোন নয়। এর আগে মার্কিন সেনাবাহিনী ব্যবহার করেছে নরওয়ের তৈরি ‘ব্ল্যাক হর্নেট’ নামের একটি হেলিকপ্টার আকৃতির ড্রোন, যাতে রয়েছে থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা। এই ড্রোনগুলো সহজেই পকেটে রাখা যায় এবং সেনাবাহিনীর জন্য তা নজরদারির একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চীনের নতুন মশা-আকৃতির ড্রোন যদিও অত্যন্ত কার্যকরী, তবুও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অতিক্ষুদ্র আকারের কারণে এটি দীর্ঘ সময় ধরে নজরদারি চালাতে পারে না। বারবার চার্জ দিতে হয়, নিয়ন্ত্রণ এবং তথ্য বিশ্লেষণ করতে হয় সীমিত পরিসরে।
অন্যদিকে এই মাইক্রোড্রোন প্রকাশ্যে আসার আগেই চীন আরও একটি চমকপ্রদ প্রযুক্তির ঘোষণা দিয়েছে, জিউটিয়ান এসএস ইউএভি নামের একটি বিশাল ড্রোনবাহী আকাশযান। চীনের দাবি অনুযায়ী, এটি একসঙ্গে ১০০টি মাইক্রোড্রোন এবং প্রায় ২,২০০ পাউন্ড অস্ত্র বহনে সক্ষম।
চীনের এই ধারাবাহিক সামরিক প্রযুক্তি উন্নয়ন বিশ্বকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। আকারে যতই ছোট হোক না কেন, কার্যক্ষমতায় এই প্রযুক্তি এখন আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে।