পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি অঞ্চল ঘিরে অজস্র বিলাসবহুল পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠলেও সেখানকার বাসিন্দাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি বরাবরই অবহেলিত। রাঙামাটির আধুনিক সদর হাসপাতাল ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর চার দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত সেখানকার মানুষ। ফলে গুরুতর রোগীদের ৬০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করতে হয় কিংবা আরও দূরে রাজধানী ঢাকায় নিয়ে যেতে হয়। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
রাঙামাটির এ হাসপাতাল ‘জেনারেল হাসপাতাল’ নামে পরিচিত। জেলার ১০টি উপজেলার প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষের একমাত্র ভরসা এই ১০০ শয্যার হাসপাতাল, যেখানে নিয়মিত ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। শয্যার অভাবে অনেককে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা নিতে হয়, যা স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শওকত আকবর জানিয়েছেন, ৩১টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ২২ জন কর্মরত থাকলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল–সংকট প্রকট।
গুরুতর রোগীদের ৬০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা আরও দূরে রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরিত করতে হয়। এ কারণে রোগী ও স্বজনদের শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হতে হয়। জুরাছড়ির প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগীদের নৌপথে রাঙামাটি এসে আবার চট্টগ্রামে দৌড়ানো কিংবা কিডনির রোগীদের সপ্তাহে দুই দিন চট্টগ্রাম গিয়ে ডায়ালাইসিস বাবদ ১২ হাজার টাকা খরচ করে আসা-যাওয়ার ধকল পোহানো—এসব ঘটনা রাঙামাটির স্বাস্থ্য খাতের করুণ চিত্র তুলে ধরে।
আরও হতাশাজনক হলো, ২০০৯ সালে সিসিইউ চালুর উদ্দেশ্যে নির্মিত ছয়তলা ভবনটি গত ১৫ বছরেও স্বাস্থ্যসেবার কাজে ব্যবহৃত হয়নি। উল্টো ২০১৫ সাল থেকে সেখানেই রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী কার্যক্রম চলছে, যার স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ ২০২৮ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শুরু হয়নি। একইভাবে ২০২১ সালে আইসিইউ, সিসিইউ ও ডায়ালাইসিস ইউনিট চালুর জন্য একটি ১১ তলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও ছয়তলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনো সেটি বুঝে পায়নি।
সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু ভবন নির্মাণ করলেই হবে না, সেবার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, সরঞ্জাম এবং অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।