বিজনেস ডেস্ক: বিদ্যুৎ এ জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারের শিডিউল লোডশেডিং শুরুর পর থেকেই চার্জার লাইট ও ফ্যানের বেচাকেনা বেড়েছে। এ সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়েছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই সুযোগে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার কথাও বলছেন অনেক ব্যবসায়ী।
সাধারণ মানুষের সংকটের সুযোগে এমন লাগামহীন বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে আগামীকাল রোববার থেকে খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিইএ)।
রাজধানীর গুলিস্থান স্টেডিয়াম মার্কেট ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় চার্জার ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি চার্জার লাইটে একশ থেকে দু শ টাকা, চার্জার ফ্যানে কোম্পানি ভেদে বারো শ থেকে দুই হাজার টাকা, কুলার ফ্যানে দুই থেকে তিন হাজার টাকা, ফ্যানের ব্যাটারিতে চার শ টাকা, আইপিএসে আটশ থেকে ১০ হাজার টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া বেড়েছে বিভিন্ন প্রকারের ব্যাটারিতে ব্যবহার করা ডিস্টিল্ড ওয়াটারের দামও।
স্টেডিয়াম মার্কেটে প্রেসিডেন্ট ইলেকট্রনিকস নামের একটি দোকানে দেখা যায়, চীনে তৈরি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায়। যা কিছুদিন আগেও ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। ওয়ালটনের তৈরি স্ট্যান্ডসহ চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৮০০ টাকায় যা এক মাস আগে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর কুলার ফ্যানে আড়াই হাজার টাকা বেড়ে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বায়তুল মোকাররম এলাকার একটি দোকানে দেখা যায়, মাসখানেক আগেও দু শ টাকায় বিক্রি হওয়া চীনা চার্জার লাইট এখন ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দোকানি শাহ আলম বলেন, ‘এ লাইটগুলো আমরা ১৫০ টাকায় কিনে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করতাম। এখন আমাদেরই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। তার ওপর পরিবহন খরচ, দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন আছে। এখন কমপক্ষে ৩০০ টাকায় বিক্রি না করলে আমাকে লোকসান গুনতে হবে।’
এ ছাড়া ব্যাটারির দোকানে দেখা গেছে চার্জার ফ্যানে ব্যবহৃত ব্যাটারির দাম ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯০০ টাকা। ব্যাটারি ও আইপিএসে ব্যবহৃত ডিস্টিল্ড ওয়াটারের ছয় লিটারের কনটেইনারের দাম ৩৬০ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকায়।
হঠাৎ এভাবে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিডিউল লোডশেডিং ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত পাইকারিতেই দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকেরা। মাহী ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী শামসুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ী করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
অন্য দিকে ডলারের দাম বাড়তি থাকায় আমদানি কমে যাওয়ার অজুহাতে পাইকাররা দাম বাড়িয়েছেন। শামসুর রহমান দাবি করেন, ‘দাম বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায় আমাদের পুঁজি বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের লাভ বাড়েনি বরং আগের তুলনায় লাভ আরও কমেছে।’
শিডিউল লোডশেডিং ঘোষণার পর হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক বেড়েছে চার্জার ফ্যান ও লাইটের মতো ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম। ছবি: আজকের পত্রিকাশিডিউল লোডশেডিং ঘোষণার পর হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক বেড়েছে চার্জার ফ্যান ও লাইটের মতো ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিইএ)। সংগঠনটি বলছে, চার্জার ফ্যানসহ যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে তার সিংহভাগই আমদানি করা হয়। ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে কাঁচামালে খরচ বেড়েছে। ফলে ইলেকট্রিক্যাল পণ্যের দাম কিছুটা বাড়বেই।
এ সুযোগে কেউ যাতে অতি মুনাফার লোভে ক্রেতাদের হয়রানি করতে না পারে এ জন্য খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা ভাবছে সংগঠনটি। বিইএর দপ্তর সম্পাদক এজাবুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগামীকাল রোববারের মধ্যে আমরা এসব পণ্যের খুচরা দাম নির্ধারণ করে দেব। এর পর যদি কেউ অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে তাহলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠা এসব ইলেকট্রিক পণ্যের অতিরিক্ত দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও। সংস্থার পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চাহিদা বাড়ায় স্বাভাবিক ভাবেই মুনাফা বেশি হওয়ার কথা। তবুও অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত মুনাফা করতে হবে কেন? দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা এরই মধ্যে একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছি। এ ছাড়া বিইএকে আমরা খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। খুচরা দাম ঠিক করে দেওয়ার পর আমরা অভিযানে আরও কঠোর হব।’