চবি শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীদের ডাকা এ অবরোধ আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে শুরু হয়। শাখা ছাত্রলীগের ছয়টি উপপক্ষ এ অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। উপপক্ষগুলো হলো ভার্সিটি এক্সপ্রেস, বাংলার মুখ, এপিটাফ, রেড সিগন্যাল, কনকর্ড ও উল্কা। উপপক্ষগুলোর নেতা-কর্মীরা চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে কয়েকজন এসে পরিবহন দপ্তরের ফটকে তালা দেন। এ সময় তাঁরা কয়েকটি বাসের চাবিও নিয়ে যান। তাই ক্যাম্পাস থেকে কোনো বাস নগরের উদ্দেশে যেতে পারেনি।
নগরের বটতলী থেকে ক্যাম্পাসে দিনে সাতবার আসা-যাওয়া করে শাটল ট্রেন। এ ট্রেনে দৈনিক ১০ হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করেন। কিন্তু অবরোধ ডাকা নেতা-কর্মীরা একটি ট্রেন নগরের ঝাউতলা স্টেশন ও আরেকটি ষোলশহর স্টেশনে আটকে দিয়েছেন। ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার এস এম ফখরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, দুটি শাটল স্টেশনে আটকে রয়েছে। কখন চলবে, তা বলা যাচ্ছে না।
কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে চবিতে ছাত্রলীগের একাংশের গণস্বাক্ষর কর্মসূচি
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, আজ ১৪টি বিভাগের ১৬টি বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল। এগুলো হলো ফিশারিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষ, সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টার, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষ, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষ ও প্রথম বর্ষ, পালি বিভাগের স্নাতকোত্তর, মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টার, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম সেমিস্টার, দর্শন বিভাগের স্নাতকোত্তর, আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টার, ফাইন্যান্স বিভাগের সপ্তম সেমিস্টার, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা।
ছাত্রলীগের একাংশের অবরোধের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের। সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, শাটল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও অনেক শিক্ষার্থী বাসে করে আসছেন। ক্যাম্পাসে এসে তাঁরা শোনেন, আজকের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এতে তাঁরা হতাশ হন।
চবিতে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের অবরোধ, শাটলচালককে ‘অপহরণ’
আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমানের আজ চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল। প্রস্তুতি নিয়ে আজ সকালে ক্যাম্পাসে এসে তিনি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার কথা জানতে পারেন। মাহফুজুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সমস্যার ফল ভোগ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। করোনার কারণে এমনিতেই আমরা পিছিয়ে গেছি। এখন আবার ছাত্রলীগের অবরোধের কারণে পরীক্ষা স্থগিত হলো।’
দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এ ধরনের পরিস্থিতি চাই না।’
ভার্সিটি এক্সপ্রেস উপপক্ষের নেতা ও চবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে কমিটি বর্ধিত করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু শীর্ষ নেতারা আমাদের দাবি আমলে নেননি। তাই আমরা অবরোধের ডাক দিয়েছি। দাবি না মানা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবরোধ চলবে।’
অবরোধের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংগঠনিক ইস্যুতে ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে অবরোধ ডেকেছেন। অবরোধকারীদের দাবিদাওয়া পূরণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু করার নেই। তবে আমরা অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি।’
চবিতে ছাত্রলীগের অবরোধে আটকাল পরীক্ষা
তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন,এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠনটির কেন্দ্রীয় দপ্তর চবি শাখার ৩৭৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। কমিটি ঘোষণার পরই পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৪টি হলের প্রায় ৩০টি কক্ষ ভাঙচুর করেন। এদিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে দিয়ে অবরোধের ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা নতুন শাখা কমিটি গঠনের দাবি জানান। এ অচল অবস্থা অব্যাহত থাকে ২ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি বিভাগের ১১টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষে আছেন সাবেক সিটি মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারীরা। আরেকটি পক্ষে আছেন সাবেক সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা।