আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দুইবার গুমের শিকার হওয়া আলোচিত ছাত্রনেতা মফিজুর রহমান আশিক। মাঠে নেমে লাগাতার প্রচারণা চালিয়ে ইতোমধ্যে তিনি বাঁশখালীতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। যা স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন প্রেরণা জুগিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক নেতা।
দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে গুমফেরত সাবেক ছাত্রনেতা আশিক বলেন, ১/১১ থেকে শুরু করে গত ১৭ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে আমার ত্যাগ, অবদান ও ভূমিকা বিবেচনায় আমি সারা বাংলাদেশেই প্রথম সারির ত্যাগী নেতাদের একজন। তারেক রহমান ক্লিন ইমেজের ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেবেন—এ ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তাই বাঁশখালীতে মনোনয়ন নিয়ে আমি প্রবল আশাবাদী।
গুম, নির্যাতন এবং বেঁচে ফেরার স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে বলিষ্ট ভূমিকা রাখায় ঐ বছরের ৫ ডিসেম্বর রাজধানীর মিরপুর থেকে আমাকে গুম করা হয়। গুমকালীন সময়ে চোখ বাঁধা ও হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় ইলেকট্রিক শক ও ঝুলিয়ে রেখে আমার ওপর নির্মম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। দুই মাস পর ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মাঝরাতে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় মাইক্রোবাসে করে আমাকে হাতিরঝিলে রেখে চলে যায়। গুম থেকে ফেরত আসলেও আমার স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফেরত আসতে বেশ সময় লেগেছে।
ওয়ান ইলেভেনের সময়ের ভূমিকা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক ছাত্র আশিক বলেন, ২০০৭ সালের ৭ মার্চ ওয়ান-ইলেভেনের অবৈধ সরকার তারেক রহমানকে গ্রেফতার করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রথম বিক্ষোভ হয় সেটাতে আমি ছিলাম। এরপর ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে সেনাবাহিনীবিরোধী ছাত্রবিক্ষোভে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছি। ২০০৮ সালের ২৫ আগস্ট তারেক রহমান পিজি হাসপাতালে মাথায় আঘাত পেয়ে আহত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে পুলিশের সাথে যে সংঘর্ষ হয়, তাতেও অগ্রভাগে ভূমিকা রেখেছি।
আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে ছাত্রদল নেতা আশিক বলেন, ২০০৯-১৩ সালে মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধসহ প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলাম। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবীব উন নবী সোহেলের সঙ্গে ছাত্রদলের একমাত্র নেতা হিসেবে প্রথম মিছিল বের করি।
কারাভোগের কথা জানিয়ে আশিক বলেন, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে ওয়ারেন্ট জারির প্রতিবাদে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলে দৈনিক বাংলার মোড় থেকে মতিঝিল থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। দেড় মাস পর মুক্তি লাভ করি। কারাগার থেকে বের হয়ে ফের গণতান্ত্রিক সকল সংগ্রামে সামনের সারিতে থেকে ভূমিকা রেখেছি।
দ্বিতীয়বার গুমের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০২২ সালের আগস্টে গুমের বিষয়ে আমি ইউএস অ্যাম্বেসির হিউম্যান রাইটস অফিসারসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে সাক্ষাৎকার দিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হই। ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর মধ্যরাতে সিটিটিসি কর্তৃক জঙ্গি নাটক মঞ্চায়নের তথ্যচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ দেশি-বিদেশি মিড়িয়া এবং সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর কাছে সরবরাহ করি। ফলে দ্বিতীয় দফায় সিটিটিসি আমাকে গুম করে রাখে। আমার দ্বিতীয় দফা গুমের ঘটনা মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের বারবার সন্ধান দাবি এবং মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্রের উদ্বেগের কারণে পরে আমাকে রাষ্ট্রদ্রোহ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। সেই মামলায় আমি নয় মাস কারাগারে ছিলাম।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আশিক বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকে আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সাথে যোগাযোগ রাখতাম। ১৬ জুলাই রাতে আন্দোলন স্থগিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হলে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে দিয়ে ১৭ জুলাই গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি ঘোষণা দিতে ভূমিকা রাখি। পরবর্তীতে আসিফ মাহমুদ ও হান্নান মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিই এবং ছাত্রদল নেতাকর্মীদের নিয়ে ১৮ জুলাই থেকে মিরপুরে আন্দোলন অর্গানাইজ করি। সেসময় আমি নিজে আহত হই। ২ আগস্ট ছাত্র সমন্বয়করা মুক্তি পাওয়ার পর তাদের সাথে সাংবাদিক মুশফিক ফজল আনসারী, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ও আমি একত্রে মিলে এক দফা ঘোষণা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আমি ছাত্র সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদকে ড. ইউনূসের সাথে যোগোযোগ করিয়ে দেই।
এদিকে বাঁশখালীতে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আশিককে নিয়ে উচ্ছ্বসিত স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা। উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল মনছুর শিকদার বলেন, গুমফেরত ছাত্রদল নেতা মফিজুর রহমান আশিক ক্লিন ইমেজের অধিকারী। তিনি দলের দুঃসময়ে সর্বোচ্চ রাজপথে ছিলেন। আমাদের বিশ্বাস, দেশনায়ক তারেক রহমান ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে তাকেই বাঁশখালীতে মনোনয়ন দিবেন।
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার আলোকে নতুন বাংলাদেশ গড়তে বাঁশখালীতে আশিক ভাইয়ের বিকল্প নেই। অন্যান্য মনোনয়প্রত্যাশীরা যখন ফ্যাসিস্ট দোসরদের সঙ্গে আতাঁতে ব্যস্ত, তখন তিনিই একমাত্র নেতা যিনি ফ্যাসিস্ট দোসরদের বিচার ও গ্রেপ্তারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। এজন্য তিনি বাঁশখালীতে তরুণ প্রজন্মের আইকনে পরিণত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. ইমরানুল হক বলেন, বাঁশখালীতে সাবেক ছাত্রদল নেতা আশিক ভাই আনপ্যারালাল অবস্থানে আছেন। তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। বাঁশখালীতে আমরা তাকেই ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাই।

