চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে বিএনপির প্রতিনিধিদল। ফটিকছড়ির আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরে হেফাজত আমিরের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। সেখানে তারা প্রায় ৪৫ মিনিটের আলোচনায় ১৫ মিনিট ‘একান্ত কথা’ বলেন। নির্বাচন সামনে রেখে যখন জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বে ইসলামী দলগুলোকে একছাদের নিচে আনার তোড়জোড় চলছে। এমন সময় হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির এই বৈঠক রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বিশেষ করে হেফাজতের আলেমদের আকিদাগত বিষয় নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। কাজেই হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির এই বৈঠক নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দেয়।
শুক্রবার (১ আগষ্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাউদ্দিন আহমদ ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল বাবুনগরে হেফাজতের আমির আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় নেতারা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সালাম জানিয়ে হেফাজতের আমিরের কাছ থেকে দোয়া চান। হেফাজতে ইসলামের আমিরও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও দলটির প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা জানান। তবে সাম্প্রতিক কিছু বিষয় নিয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন বিএনপি নেতাদের।
সেখানে আমিরের সঙ্গে কী কথা হয়েছেÑ জানতে চাইলে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদ্রীস প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে তারা এসেছিলেন। তারা আমিরকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সালাম জানিয়েছেন, দোয়া চেয়েছেন। আমির বলেছেন, ইসলামী মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমের জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে তিনি মহব্বত করেন। দলটির প্রতিও তার মহব্বত রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক কিছু বিষয়ে তিনি বিব্রত জানিয়ে এসব বিষয়ে সতর্ক হতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধ করেন।
কোন কোন বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির সতর্ক করেছেনÑ এই প্রশ্নের জবাবে মীর ইদ্রীস বলেন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন হানাহানিতে দলটির নাম জড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের কিছু নেতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বিভাজনের বক্তব্য দিচ্ছেন, আলেমদের বিরুদ্ধেও কেউ কেউ বলছেন। যদিও হুজুর কারও নাম বলেননি। বিএনপি নেতারা বলেছেন, এসব বিষয়ে তারা শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
পরে সাংবাদিকদের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে হেফাজতে ইসলামের আমির ও সকলের মুরব্বি আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছি। আমরা তার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর এবং দোয়া নিয়েছি।
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে হেফাজতের অবদান স্বীকার করে তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে যে হামলা-মামলা আলেম সমাজের ওপর হয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। শাপলা চত্বরে পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। সেখানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রকৃত তালিকা করাও সম্ভব হয়নি। এমনকি অনেকের কবরও শনাক্ত করা যায়নি। ফ্যাসিবাদবিরোধী ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে যারা সংগ্রাম করেছেন, রক্ত দিয়েছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেনÑ তাদের সকলের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে ঐক্য ধরে রাখা প্রয়োজন মনে করে বিএনপি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। তাদের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। তবে হেফাজতে ইসলামের অধীনে কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক আলাপ হবে।
এর আগে, দুপুর ১টার দিকে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারীতে যান বিএনপির প্রতিনিধিদল। এ সময় বিএনপি নেতারা হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত দুই আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর কবর জিয়ারত করেন। পরে সেখানে হেফাজতের প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, সদ্য বিলুপ্ত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর, ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার ও সদস্য সচিব জহির আজম চৌধুরী প্রমুখ।