২০১৯ সালের ২৮ মার্চ ঘুসের টাকাসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের হাতে গ্রেফতার হন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিমেল কদর। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া দুদকের মামলায় কারাগারেও যান তিনি। সেই আজিমেল কদর ফের উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পদে যোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে শিক্ষক সমাজের মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ।
জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় ফটিকছড়ি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (বরখাস্ত) আজিমেল কদরকে ঘুস নেওয়ার দায়ে ২০২৩ সালের ১৫ জুন আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের আদালত। সেই কর্মকতা গত বৃহস্পতিবার ফটিকছড়ি শিক্ষা অফিসে যোগ দেন। এই খবর শিক্ষক সমাজে পৌঁছালে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষক নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনতিবিলম্বে তাকে প্রত্যাহার না করলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার দাবি জানান তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, সরকারি বিধিমতো ওই কর্মকর্তাকে এখানে যোগ দিতে হবে। তারপর অন্যত্র বদলি করা হবে।
জানা যায়, ফটিকছড়ির বেড়াজালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তারকে বদলির জন্য ৩০ হাজার টাকা ঘুস দাবি করেন শিক্ষা কর্মকর্তা আজিমেল কদর। এমন অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ দুদকে লিখিত অভিযোগ করেন তাসলিমা। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুদক টিম ফাঁদ পেতে ঘুসের ১০ হাজার টাকাসহ আজিমেল কদরকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় ফটিকছড়ি থানায় দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। দুদক তদন্ত শেষে আজিমেল কদরকে আসামী করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর আদালত অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলায় মোট নয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ১ বছর ৬ মাস ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ১ বছর ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। পরে হাইকোর্টে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি। ২০২৪ সালের ৫ জুন বিচারিক আদালতের সাজা বাতিল করে মামলার অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা চলতি বছরের ২২ অক্টোবর আজিমেল কদরের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, হাইকোর্টের ক্রিমিনাল আপিল মামলায় ২০২৪ সালের ৫ জুনের রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আপিল দায়ের না করার সিদ্ধান্ত নেয়। যা চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর দুদক এক পত্রের মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
দুদকের হাতে গ্রেফতারের দিনই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে এ মামলায় বিচারিক আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হন তিনি। বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছিলেন আজিমেল কদর। পরে উচ্চ আদালত বিচারিক আদালতের সাজার রায় বাতিল করে তাকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আর আপিল না করার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এ সুযোগে আজিমেল কদরের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে অধিদপ্তর তাকে পুনরায় একই উপজেলায় একই পদে পদায়ন করে। গত ২৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) পদে যোগ দেন তিনি।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নেতা জেএম তওহিদ বলেন, শিক্ষকদের অভিযোগে দুদকের হাতে গ্রেফতার হন আজিমেল কদর। আদালতে সাজাও হয়। কিন্তু আবার কীভাবে তিনি এই পদে যোগ দিলেন? শিক্ষক সমাজ মানতে পারছে না। আমরা তাকে দ্রূত প্রত্যাহার চাই।
পুনরায় যোগদানের বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিমেল কদর বলেন, হাইকোর্ট আমাকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর আমার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে মন্ত্রণালয়। পরে অধিদপ্তর আমাকে স্বপদে পদায়ন করে। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) আমি করেছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, নিয়ম অনুসারে তিনি কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। শিক্ষকদের অসন্তোষের বিষয়টি জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

