উৎপাদন কম, সেই সঙ্গে কমেছে আমদানি করা এলএনজি; দুই মিলিয়ে আগামী কিছু দিন গ্যাস সঙ্কট চলতে পারে বাংলাদেশে।
বুধবার তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকে ১০ দিন সরবরাহে ঘাটতির কথা জানানো হলে আরও খবর নিতে গিয়ে সার্বিক সঙ্কটের কথাটি জানা যায়।
তিতাস গ্যাস বুধবার এক জরুরি বার্তায় বলে, ‘কারিগরি কারণে’ ১২ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিতাস অধিভুক্ত এলাকায় গ্যাসের স্বল্পচাপ বিরাজ করতে পারে। এজন্য গ্রাহকদের কাছে দুঃখও প্রকাশ করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিবিয়ানা ফিল্ডের একটা কূপ সংস্কার হচ্ছে। পাশাপাশি এলএনজি টার্মিনালগুলো থেকেও প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম আসছে। ফলে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কমে যাবে।”
এতে নিজের বিতরণ সংস্থার ঘাটতির হিসাব দিয়ে তিতাসের এমডি বলেন, “আনুপাতিক বণ্টনের হারে তিতাসের সরবরাহ লাইনে হয়ত ২০০ থেকে আড়াইশ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কমে যাবে।”
বাংলাদেশে দৈনিক যে পরিমাণ গ্যাস বিতরণ হয়, তার অর্ধেকের বেশি হয় তিতাসের মাধ্যমে। এক তিতাসের গ্রাহকরা পায় ১৭০০ ঘনফুট গ্যাস, বাকি কয়েকটি কোম্পানির গ্রাহকরা সম্মিলিতভাবে পায় ১৩০০ ঘনফুটের মতো।
গ্যাসের সার্বিক চিত্রের দৈনিক হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে থাকে পেট্রোবাংলা, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কর্তৃপক্ষ বা আরপিজিসিএল এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। তবে সরকারি ওয়েবসাইটগুলো বুধবার ‘ডাউন’ থাকায় সেখানে গ্যাস উৎপাদনের চিত্র জানা যায়নি।
রাতে পেট্রো বাংলার এলএনজি শাখার ডিজিএম শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ১১ জানুয়ারি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে ৪০১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এসেছিল। স্বাভাবিক সময়ে যেটা ৬৫০ থেকে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত আসত।
পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডে ২৬টি কূপ রয়েছে। সেখান থেকে ১২৫০ মিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস আসে। এখন সেখানে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। সেখানে গ্যাসের কিছুটা সঙ্কট হতে পারে।
“আমাদের কিছু কিছু কূপে মাঝে মধ্যে পানি ও বালু চলে আসে। শীতের দিনে গ্যাসের প্রেসারও কম থাকে। বাঙ্গুরা কূপেও একই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এসব কারণে গ্যাসের সঙ্কট হতে পারে।”
দেশীয় কূপগুলো থেকে গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) । এর সঙ্গে এলএনজি থেকে ৭০০ এমএমসিএফডি যোগ হয়ে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস সরবরাহ হচ্ছিল।
দুই মাস আগে সাগরে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বা এফএসআরইউ আংশিক বিকল হয়ে যাওয়ার পর এখন কূপের রক্ষণাবেক্ষণ শুরু হওয়ায় গ্যাস সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে।
সরবরাহ কমে যাওয়ায় তখন থেকেই ঢাকার কিছু কিছু অংশে ঘরে গ্যাস স্বল্পতার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল।
বাসাবো আহমদবাগের বাসিন্দা দেবাশীষ দেব বলেন, অনেক দিন ধরেই দিনের বড় সময়জুড়ে তার বাসায় গ্যাস থাকে না। ভোররাতে উঠে দিনের রান্না সারতে হয়।
তবে নতুন করে যে সঙ্কট শুরু হয়েছে, গৃহস্থালিতে তার প্রভাব কেমন, তা এখনও বোঝা যায়নি।