জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘গোপালগঞ্জে যারা আক্রমণ করেছে, তারা জানে না যে এই আক্রমণ আমাদের আরও দ্বিগুণ শক্তিশালী করেছে। এর প্রমাণ আমরা ফরিদপুরে দিয়েছি, রাজবাড়ী দিয়েছি, এই মানিকগঞ্জে দিচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার রাতে মানিকগঞ্জে আয়োজিত পথসভায় নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের ভাষাশহীদ রফিক চত্বরে এ পথসভার আয়োজন করা হয়।
নির্বাচনমুখী একটি দলের উদ্দেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা কেন গোপালগঞ্জে গেলাম তা নিয়ে তারা প্রশ্ন করেছেন। আওয়ামী লীগ যদি মাথা উঁচু করার চেষ্টা করে, বিপ্লবী ছাত্র-জনতা আবার তাদের পরাস্ত করবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি গোপালগঞ্জের প্রতিটি গ্রামে প্রোগ্রাম করব ইনশা আল্লাহ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই জানিয়েছিলাম, গোপালগঞ্জে প্রোগ্রাম করব। কিন্তু সরকার যথাযথ ব্যবস্থা না করার করণেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর বর্বরোচিত হামলা করেছে।’
রাজনৈতিক দল গঠনের কারণ সম্পর্কে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমরা নতুন বন্দোবস্তের কথা বলেছিলাম। আমরা এখনো সেটাই বলছি। গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের সঙ্গে হয়তো অনেকেই ছিল, অনেক অংশীদার ছিল; কিন্তু সবার স্বার্থ এক ছিল না। শেখ হাসিনা পতনে সবাই এক ছিল। কিন্তু নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণে সবাই এক ছিল না। অনেকেই চেয়েছিল পুরোনো রাষ্ট্র, পুরোনো সিস্টেমে ক্ষমতায় যাবে। আমরা সেটা বিরোধিতা করেছিলাম। ফলে আমাদের নতুন রাজনৈতিক দল করতে হয়েছে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, নতুন বাংলাদেশে কোনো একক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা থাকবে না। জাতীয় সংসদ দুই কক্ষবিশিষ্ট করতে হবে। পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হবে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হবে।
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘বিগত সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষ, ছাত্র-আলেমদের ওপর নির্যাতন করেছে। শুধু ইসলাম পালনের কারণে জুলুম করা হয়েছে। সনাতন ধর্মের ভাইদের বলব, আপনারা কোনো বিশেষ দলের সম্পদ নন, আপনারা বাংলাদেশের জনগণ। সমান অধিকার ভোগ করেন। আওয়ামী লীগই হিন্দুদের জমি দখল করেছে।’
এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা বলছি না গণ-অভ্যুত্থানের পরে তিন মাসের মধ্যে, ছয় মাসের মধ্যে একটা নির্বাচন দিয়ে দেন। আমরা বলছি নির্বাচন হতে হবে, কিন্তু সংস্কার লাগবে, বিচার লাগবে। ইনসাফের ভিত্তিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চাঁদাবাজমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
পথসভায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা যখন রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের কথা বলি, তখন তারা মৌলিক সংস্কার থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। আমরা যখন সংস্কারের কথা বলি, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে চাই, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে চাই, সে সময়ই এক পক্ষ বাঁক ঘুরিয়ে ফেলে।’
মানিকগঞ্জ জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক জাহিদুর রহমান তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়ের সঞ্চালনায় পথসভায় আরও বক্তব্য দেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। এ সময় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।