দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা। একজন রাজনীতিবিদ, কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী। অন্যজন চলতি শতকের সবচেয়ে জনপ্রিয় পপ তারকাদের একজন। দুজনকে এক সুতায় বেঁধেছে প্রেম। শুরুতে লুকিয়ে দেখা, নৈশক্লাবে যাতায়াত, গোপনে প্রমোদতরিতে ভ্রমণ করেছেন। তবে প্রেম কি চাইলেই গোপন করা যায়। দুজনেই তাই হয়তো ভেবেছেন, যথেষ্ট হয়েছে, এবার প্রকাশ্যে আসা যাক। অবশেষে কেটি পেরি আর জাস্টিন ট্রুডোর প্রেম এখন ‘আনুষ্ঠানিক’। একনজরে দেখে নেওয়া যাক এই তারকা-যুগলের প্রেমের সাতকাহন।
একনজরে কেটি ও ট্রুডো
কয়েক বছর আগেও কেউ যদি বলত পপ তারকা কেটি পেরি নাকি কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ডেট করছেন—অধিকাংশই হয়তো ভেবেই নিতেন, মজা করছে! কিন্তু ২০২৫ সালে এসে সেই অসম্ভবটাই সত্যি হলো।
চলতি বছরের গ্রীষ্মে প্রথমবার তাঁদের একসঙ্গে দেখা যায়। শুরুতে ফিসফাস—তারপর ছবি ও ভিডিও—ধীরে ধীরে রটে যায়, তাঁদের মধ্যে শুধু বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু রয়েছে। কেটির লাইফটাইমস ট্যুর চলাকালেই কতবার দেখা গেল দুজনকে কাছাকাছি সময় কাটাতে। অবসরে তাঁরা একে অপরের হাত ধরে ঘুরছেন, প্রকাশ্যে আদর—সব মিলিয়ে স্পষ্ট, ব্যাপারটা আর ‘শুধু বন্ধু’ নয়।
এই প্রেমের গল্পের শুরু দুজনেরই সম্পর্ক ভাঙার পর থেকেই। ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম নেওয়া সুপারস্টার কেটি পেরি—অরল্যান্ডো ব্লুমের সঙ্গে দীর্ঘ ৯ বছরের সম্পর্কের পর আলাদা হন। তাঁদের মেয়ে ডেইজি রয়েছে। বিচ্ছেদের পর যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, তাঁদের সম্পর্কের ধরন বদলাচ্ছে, কিন্তু তাঁরা সব সময় মেয়েকে ভালোবাসা, স্থিরতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধায় বড় করবেন।
অন্যদিকে জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি গ্রেগোয়ারের ১৮ বছরের দাম্পত্যে ইতি পড়ে ২০২৩ সালের আগস্টে। তিন সন্তানের মা–বাবা তাঁরা—বিচ্ছেদের পরও সম্পর্কটি যতটা সম্ভব রেখেছেন।
কেটি তখন সদ্য সিঙ্গেল, আর ট্রুডোও বয়সী ব্যাচেলর হিসেবে ফিরেছেন এক বছরেরও বেশি সময় হলো। একসময় যা শুধু পরিচয় ছিল, তা ধীরে ধীরে পরিণত হলো ঘনিষ্ঠতায়। আর ট্রুডো হয়তো নিজেই বুঝলেন—ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়েরা সত্যিই ভুলে যাওয়ার মতো নয়! দুজনই এখন তাঁদের প্রেম লুকোচ্ছেন না।
সম্পর্কের টাইমলাইন
২৮ জুলাই, ২০২৫—প্রথম প্রকাশ্য দেখা
মন্ট্রিয়লে একান্ত ডিনার—যেখানেই শুরু হলো জল্পনা। সেদিন কেউই নিশ্চিত বলতে পারেনি—রোমান্টিক ডেট, নাকি স্রেফ পুরোনো বন্ধু? তবে দিন যত গড়িয়েছে, উত্তরটা আরও স্পষ্ট হয়েছে—বন্ধুত্ব ছাড়াও অনেক কিছু আছে।
৩০ জুলাই, ২০২৫—‘ফায়ারওয়ার্ক’-এ উড়ল প্রেমের স্ফুলিঙ্গ
ডিনারের সেই রহস্যময় রাতের অল্প কিছুদিন পরই মন্ট্রিয়লে কেটি পেরির কনসার্টে হাজির হলেন জাস্টিন ট্রুডো। মঞ্চে পপ ডিভার জ্বলজ্বলে উপস্থিতি আর দর্শকের উচ্ছ্বাস—সব মিলিয়ে তিনি বেজায় উপভোগ করছিলেন অনুষ্ঠানটি।
কিন্তু সত্যিকারের দৃশ্যটা ঘটল সেই মুহূর্তে, যখন কেটি গাইছিলেন তাঁর সুপারহিট গান ‘ফায়ারওয়ার্ক’। সামনে দাঁড়িয়ে ট্রুডো যেন চোখের দৃষ্টি সরাতেই পারছিলেন না। বিস্ময়ভরা চোখে গলা মিলিয়ে গান করছিলেন—সেই দৃষ্টিতে ছিল মুগ্ধতা, ছিল ভালোবাসার টুকরা ইশারা।
দর্শকদের ক্যামেরা তখন শুধু মঞ্চেই নয়—এক সাবেক প্রধানমন্ত্রী কীভাবে এক পপ আইকনের দিকে তাকিয়ে থাকেন, সেই গল্পও সেখানে রেকর্ড হচ্ছিল। প্রেমের আতশবাজি যে সত্যিই ফুটতে শুরু করেছে, তা আর গোপন থাকেনি কারও কাছে।
৩ আগস্ট, ২০২৫—অরল্যান্ডোর মজার প্রতিক্রিয়া
কেটি পেরি আর জাস্টিন ট্রুডোর প্রেম গুঞ্জন যখন দিন দিন আরও জোরালো হচ্ছে, সেই সময় সাবেক সঙ্গী অরল্যান্ডো ব্লুম যেন দেখালেন দারুণ রসবোধ।
একটি ব্যঙ্গাত্মক অনলাইন আর্টিকেল ঘুরে বেড়াচ্ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়—যেখানে দাবি করা হয়, অরল্যান্ডো নাকি জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে ডেট করছেন! ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ তারকা সেই পোস্টে কোনো শব্দ ব্যয় না করে শুধু কয়েকটি তালির ইমোজি দিয়ে দিলেন মন্তব্যের খাতায়।
ব্যস! মুহূর্তেই হাসির রোল পড়ে গেল ভক্তদের মধ্যে। বোঝাই গেল—কেটি-ট্রুডো খবরে তাঁর রাগ বা ক্ষোভ নেই, বরং পরিস্থিতিকে তিনি নিয়েছেন বেশ হালকাভাবেই।
১১ অক্টোবর, ২০২৫—সমুদ্রে চুম্বন
বন্ধুত্বের সীমা পেরিয়ে কেটি পেরি আর জাস্টিন ট্রুডোর সম্পর্ক যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে—তা এবার আর লুকোনো রইল না। সান্তা বারবারার উপকূলে ছুটির মুহূর্ত কাটাতে গিয়ে দুজনকে দেখা গেল একদম সিনেমার রোম্যান্সে।
ইয়টের ডেকে দুজনের আরামদায়ক সময়, হাসি-ঠাট্টা আর হঠাৎই ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা—ফটোগ্রাফারদের ক্যামেরায় ধরা পড়ল তাঁদের খোলামেলা চুম্বন। ভক্তদের জন্য এটি ছিল সেই মুহূর্ত, যখন গুঞ্জন পরিণত হলো নিশ্চিত সত্যে। বিশ্বজুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের রোমান্টিক ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়তেই আলোচনা চরমে—পপ সুপারস্টার আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দুজনের এই অসাধারণ জুটিকে নিয়ে উৎসাহ তুঙ্গে!
