ওপেনএআই মঙ্গলবার নিজেদের ওয়েব ব্রাউজার ‘অ্যাটলাস’ উন্মোচন করেছে, যা সরাসরি গুগল ক্রোমের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাজারে এসেছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যখন ক্রমেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-ভিত্তিক অনুসন্ধানের দিকে ঝুঁকছে, তখন এই নতুন ব্রাউজারের ঘোষণা প্রযুক্তি দুনিয়ায় আলোড়ন তুলেছে।
এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে অ্যাসোসিয়েট প্রেস।
বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান স্টার্টআপ ওপেনএআই আশা করছে, চ্যাটজিপিটি-নির্ভর এই ব্রাউজারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা অনলাইনে অনুসন্ধান করবে এবং তথ্য সংগ্রহ করবে, যা কোম্পানির জন্য নতুন আয়ের পথ খুলে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চ্যাটজিপিটি এতটাই কার্যকরভাবে সারাংশ তৈরি করে দেয় যে ব্যবহারকারীরা হয়তো আর প্রচলিত ওয়েব লিংকে ক্লিক করতেও আগ্রহী নাও হতে পারেন—যা অনলাইন প্রকাশনা শিল্পের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
বর্তমানে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮০০ মিলিয়নের বেশি, যদিও অনেকেই এটি বিনামূল্যে ব্যবহার করেন। সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে লোকসানে রয়েছে এবং মুনাফা অর্জনের নতুন উপায় খুঁজছে।
ওপেনএআই জানায়, অ্যাটলাস প্রথমে অ্যাপলের ল্যাপটপে চালু হবে এবং পরে এটি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ, অ্যাপলের আইওএস ও গুগলের অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমে পাওয়া যাবে।
ওপেনএআই প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান বলেন, ‘এটি এক দশকে একবার পাওয়া সুযোগ—একটি ব্রাউজার কী হতে পারে, সেটিকে নতুনভাবে কল্পনা করার।’
তবে বাজার গবেষণা সংস্থা ফরেস্টারের বিশ্লেষক প্যাডি হ্যারিংটন বলেন, ‘গুগলের মতো বিপুল বাজার শেয়ারধারীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা সহজ নয়।’
এই ঘোষণা আসে কয়েক মাস পর, যখন ওপেনএআইয়ের এক নির্বাহী আদালতে সাক্ষ্য দেন যে সুযোগ পেলে তারা গুগলের ক্রোম ব্রাউজারটি কিনতেও আগ্রহী হতেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বিচারক অমিত মেহতা গত মাসে রায়ে বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ইতিমধ্যেই বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি করছে—তাই গুগল ভাঙার প্রয়োজন নেই। ক্রোম বর্তমানে প্রায় ৩ বিলিয়ন ব্যবহারকারী নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার। গুগল ইতোমধ্যেই এতে নিজেদের জেমিনি প্রযুক্তি ব্যবহার করে এআই ফিচার যুক্ত করেছে।
ওপেনএআইয়ের জন্য এই বাজারে প্রবেশ কঠিন হলেও ইতিহাস বলছে নতুন প্রযুক্তি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ২০০৮ সালে গুগল ক্রোম চালু হওয়ার সময় মাইক্রোসফটের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ছিল প্রভাবশালী, কিন্তু দ্রুত ক্রোম সেটিকে পেছনে ফেলে দেয়। এখন মাইক্রোসফটের নতুন এজ ব্রাউজার ক্রোমের দূরবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী মাত্র।
এআই–ভিত্তিক অনুসন্ধানের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস–নরক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ শতাংশ মানুষ অন্তত কিছু সময় এআই ব্যবহার করে তথ্য অনুসন্ধান করেন; তরুণদের (৩০ বছরের নিচে) মধ্যে এই হার ৭৪ শতাংশ।
তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, এআই চ্যাটবটের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ভুল তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক সময় এই বটগুলো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভ্রান্ত তথ্যও প্রকাশ করে—যা ‘হ্যালুসিনেশন’ সমস্যা নামে পরিচিত।
অ্যাটলাস ব্রাউজারের একটি প্রিমিয়াম ফিচার হলো ‘এজেন্ট মোড’, যা ব্যবহারকারীর নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেই ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করে, ক্লিক করে ও ব্যাখ্যা দেয়। অল্টম্যান বলেন, ‘এটি মূলত আপনার হয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।’
কিন্তু বিশ্লেষক হ্যারিংটনের মতে, ‘এটি যেন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিত্ব কেড়ে নেওয়ার মতো। প্রোফাইলটি আপনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হলেও, আসলে কে নিয়ন্ত্রণ করছে—আপনি, না সেই ইঞ্জিন—সেটিই ভাবনার বিষয়।’
ওপেনএআইয়ের এই পদক্ষেপ প্রযুক্তি দুনিয়ায় এক নতুন প্রতিযোগিতার সূচনা করতে পারে, যেখানে ব্রাউজারই হয়ে উঠবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন যুদ্ধক্ষেত্র।