ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পাঁচ মাস পার হচ্ছে আজ। হামাস ধ্বংসের নামে দখলদার রাষ্ট্রটির সেনারা নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানকার স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জা ও হাসপাতালে। অব্যাহত এ হামলা ও অভিযানে ইতোমধ্যে প্রায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা।
টানা ৫ মাসের নির্বিচার এ আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৩১ হাজার ফিলিস্তিনি, যেখানে এক তৃতীয়াংশই শিশু। এবার এ মৃত্যুর মিছিলে যোগ হতে শুরু করেছে অনাহারে মৃতের সংখ্যা। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পানিশূন্যতা এবং পুষ্টিহীনতায় অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঘোষিত এই মৃত্যুর সংখ্যা শুধুমাত্র হাসপাতালে যারা পৌঁছেছেন বা হাসপাতালে যারা মারা গেছেন তাদের মৃত্যুকেই সামনে আনছে। আরও বহু লোক হাসপাতালে না পৌঁছানোর ফলে অনাহারে নীরবেই মারা যাচ্ছেন।
এদিকে গাজায় পূর্ণমাত্রার দুর্ভিক্ষ এড়াতে আরও বেশি উদ্যোগী হতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাউথ আফ্রিকা। এ ছাড়া দ্রুত যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বানও জানিয়েছে দেশটি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক পলা গাভিরিয়া বেটানকুর বলেছেন, সামরিক অভিযানে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলবে বিশ্বকে এমন কল্পকাহিনীর ওপর বিশ্বাস পরিত্যাগ করতে হবে।
তিনি বলেন, গাজায় ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করার পাশাপাশি নৃশংসতার বিরুদ্ধে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে অবিলম্বে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কর্যকর করাই হবে মানবতার স্বার্থে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে আল-শিফা হাসপাতালে ১৫ বছর বয়সী এক শিশু এবং উত্তর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে ৭২ বছর বয়সী একজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এতে করে অপুষ্টি এবং ডিহাইড্রেশনের কাছে হার মেনে গাজায় প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছেছে। তবে, এটা কেবল আনুষ্ঠানিক হিসাব। আরও বহু লোক হাসপাতালে না পৌঁছানোর ফলে অনাহারে নীরবেই মারা যাচ্ছেন।
আশরাফ আল-কুদরা বিবৃতিতে আরও বলেন, উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে, বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য।
সামনে হাজার হাজার মানুষ এইভাবে অনাহারে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে আছেন বলেও সতর্ক করেছেন আল-কুদরা। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবিলম্বে মানবিক ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষ।