আজ নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীতে গত ১৪ বছরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬৭ জনের। নীমতলী, চুড়িহাট্টা ও বনানীর এফআর টাওয়ারের পর ঢাকা ট্র্যাজেডির খাতায় নতুন করে নাম লেখালো বেইলি রোড। এছাড়াও, বঙ্গবাজার, নিউমার্কেটসহ গত কয়েক বছরে ঢাকায় বেশ কয়েকটি বড় অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
নিমতলী ট্র্যাজেডি
২০১০ সালের ৩ জুন রাত ৯টার দিকে রাজধানীর চানখারপুলের নিমতলীতে একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বিস্ফোরণ ঘটে। আগুন ধরে যায় পাশের কেমিক্যালের গোডাউনে। মুহূর্তেই দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যালে ঠাঁসা ওই এলাকার বেশ কয়েকটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। যখন ভয়ংকর সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, ততক্ষণে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান ১২৪ জন। আহত হন প্রায় অর্ধশতাধিক। পুড়ে যায় ২৩টি বসতবাড়ি, দোকান ও কারখানা।
চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি
২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় হঠাৎ বিকট শব্দে সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ওয়াহেদ ম্যানশনে থাকা কেমিক্যালের কারণে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। যা ছড়িয়ে পড়ে সড়কে যানজটে আটকে থাকা পিকআপ, প্রাইভেট কার, রিকশা, ঠেলাগাড়ি ও মোটরসাইকেলে। কিছু বুঝে উঠার আগেই যানজটে আটকে থাকা অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। চুড়িহাট্টা মোড় হয়ে ওঠে যেন মৃত্যুকূপ!
আগুন লাগার ১৪ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। তার আগেই ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ৬৭ জনের। পরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১। এতে আহত হন কয়েকশ মানুষ।
এফআর টাওয়ার ট্র্যাজেডি
বনানীর বহুতল বাণ্যিজিক ভবন এফআর টাওয়ারে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুপুর ১টায় লাগা আগুনে ২৭ জনের মৃত্যু এবং শতাধিক আহত হয়। ২২তলা ওই ভবনের অষ্টম তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। এই অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জনের মৃত্যু হয় এবং ৭০ জন আহত হন।
মগবাজারের বিস্ফোরণ
২০২১ সালের ২৭ জুন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকার ‘রাখি নীড়’ নামে একটি ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ হয়। আড়ংয়ের শোরুম ও রাশমনো হাসপাতালের উল্টো দিকের মূল সড়ক লাগোয়া সেই ভবন। ওই ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন দুই শতাধিক ব্যক্তি। বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই বিকট ছিল যে প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা বলেছেন, এমন বিকট আওয়াজ তারা আগে তারা শুনেননি।
ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ বলেছেন, শর্মা হাউস নামে ফুডশপে গ্যাস জমে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে, প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই ট্রান্সফরমারের কথা বলেছেন।
বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটে আগুন
২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ভোরে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে আগুন লাগে। সেদিন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের পাশাপাশি আরও চারটি মার্কেট আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মার্কেটের তৃতীয় তলায় একটি এমব্রয়ডারি টেইলার্স থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। সিগারেটের আগুন অথবা মশার কয়েলের আগুন থেকে এই ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী সর্বস্ব হারিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকার।
বেইলি রোড ট্র্যাজেডি
বৃহস্পতিবার(২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নিলো ৪৬টি নিরীহ-অসহায় প্রাণ। এছাড়াও, দগ্ধ হয়ে ১৮ জন হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন।
বেইলি রোডের সাততলা গ্রীন কোজি কটেজ নামের বহুতল ভবনে রাত সাড়ে নয়টার পর আগুন লাগে। প্রতিটি ফ্লোরে রেস্টুরেন্ট ছিল। আর সবকটি রেস্টুরেন্ট ভর্তি ক্রেতা। আগুনের খবর পৌঁছালেও নিচতলার প্রবেশপথে আগুন লাগায় অনেক চেষ্টা করেও বের হতে পারেননি অনেকেই। নিরুপায় হয়ে চলে যেতে হয় উপরের ফ্লোরে।
আগুনের খবর পেয়েই একে একে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট। প্রাণপণে শুরু হয় কাজ। একদিকে আগুন নেভানো, অন্যদিকে আটকা পড়াদের উদ্ধার। দুই ঘণ্টার নিরন্তর চেষ্টায় আগুন কিছুটা বশে আসলে দমকল কর্মীরা একে একে নামাতে শুরু করেন আটকে পড়াদের।
উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, আগুন লাগা ভবনটির প্রতিটি তলার সিঁড়ি ছিলো বড় বড় গ্যাস সিলিন্ডারে ঠাঁসা। যা ব্যবহৃত হতো রেস্টুরেন্টে রান্নার কাজে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবহৃত সেসব গ্যাস সিলিন্ডারই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পুরো ঘটনায়।
আগুনের সূত্রপাত কিংবা ক্ষয়ক্ষতির পুরোপুরি তথ্য কোনো সংস্থা এখনো না দিতে পারলেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ভবনটির নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিলো কি-না এ বিষয়ে। যদিও সিআইডি বলছে কেমিক্যাল পরীক্ষা করে উদঘাটন করা হবে দুর্ঘটনার পেছনের কারণ।