পলিটিক্যাল ডেস্ক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময় থেকেই ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। পরে শুরু করেন কমিউনিস্ট পার্টি। শোষিত মানুষ অধিকার আদায় ও উপকূলীয় লবণ পানি বিরোধী আন্দোলনে ছিলেন প্রথম সারির নেতা। ১৯৯১ সালে খুলনা-৬ আসনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে কাস্তে প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্ব›িদ্ধতা করে হেরে যান মো. রশীদুজ্জামান মোড়ল। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেননি। এবারের সংসদ নির্বাচনেও আলোচনায় ছিলেন না। দলের কর্মী-সমর্থক ও এলাকাবাসীকে চমকে দিয়ে নৌকা পেলেন রশীদুজ্জামান। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ আসনে আ.লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দেন ১৮ জন। এর মধ্যে বর্তমান সাংসদ আক্তারুজ্জামান বাবু, সাবেক সাংসদ সোহরাব আলী সানা, সাবেক সাংসদ পুত্র রাশেদুজ্জামান রাসেল আলোচনায় ছিলেন। রশীদুজ্জামান দলীয় মনোনয়ন পাবেন এলাকার কেউ কল্পনাও করেননি। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায়ও ছিলেন না তিনি। এমনকি হ্যাভিওয়েট নেতাদের ভিড়ে নির্বাচনী এলাকায় একটা পোস্টার-ব্যানার দেখা যায়নি। ২৬ নভেম্বর রোববার মনোনয়ন ঘোষণার পর স্থানীয়রা ভেবেছিলেন, সাবেক এমপি পুত্র রাশেদুজ্জামান রাসেল নৌকা পেয়েছেন। এ খবরে রাসেল এর অনুসারীরা মিষ্টি বিতরণও করেন। শেষে তারা জানতে পারেন প্রার্থী রাশেদুজ্জামান নন, মো. রশীদুজ্জামান। তিনি পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের মালথ গ্রামের বাসিন্দা। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দুইদিন পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান খুলনা-৬ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ রশীদুজ্জামান। তিনি মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান, এ সময় তিনি নির্বাচনী এলাকা পাইকগাছা কয়রার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান। বুধবার নির্বাচনী এলাকায় (পাইকগাছা-কয়রা) প্রবেশ করেন। নির্বাচনী এলাকা প্রবেশদার কাশিমনগর শাপলা চত্বরে এলে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সাধারন মানুষ রশীদুজ্জামনকে পুষ্পমাল্য দিয়ে বরণ করে নেন। রশীদুজ্জামানের মনোনয়ন প্রাপ্তি প্রসঙ্গে উপজেলা আ.লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, বর্তমান সংসদ নানা অনিয়মের কারণে স্থানীয় মানুষের রোষানলে পড়ে নিগৃহীতও হয়েছেন। অন্যদিকে মো. রশীদুজ্জামান মোড়ল গরিব-দুঃখী ও মেহনতি মানুষের জন্য কাজ করেছেন। জনপ্রতিনিধি থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম বা দুর্নীতির কোনো অভিযোগ করেনি কেউ। দলীয়ভাবে গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় এবারের নির্বাচনে তিনি নৌকা মাঝি হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগদানের আগে এলাকায় পরিচিত ছিলেন কমরেড রশীদুজ্জামান নামে। কাস্তে প্রতীক নিয়ে সংসদ নির্বাচন করেন তিনি কৃষক-শ্রমিকের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় স্থানীয়দের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও ছিল। সেই সূত্রে টানা দু’বার কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জামানত হারান। পরে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার এবং বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে পদণ্ডপদবিও হারাতে হয় তাঁকে। দীর্ঘদিন দলে কোণঠাসা অবস্থায় থেকেও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে তৎপরতা চালিয়ে এসেছেন। তারই ফলস্বরূপ এবার দল থেকে তাঁর নাম সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতাকর্মী। এ বিষয়ে খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আ.লীগের মনোনয়ন প্রাপ্ত মো. রশিদুজ্জামান মোড়ল তৃণমূল পর্যায়ের একজন কর্মীকে নৌকা মার্কার মনোনয়ন দেওয়ায় দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, আমি মাঠি থেকে উঠে এসে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে এগিয়ে নিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।