বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। গেল বৃহস্পতিবারও টানা বৃষ্টিতে ঢাকার সিংহভাগ এলাকার সড়ক ও ফুটপাত তলিয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে নগরজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানি ও ড্রেনের বর্জ্য একাকার হয়ে যাওয়ায় চলাচলের সময় চরম দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী। শহরবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তারা অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করলেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। সমস্যার সমাধানে কার্যকর অর্থে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ বিগত ৫ অর্থবছরে এ খাতে খরচ করা হয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাল ও নর্দমার উন্নয়নকাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। মাঝে সরকারের এ মোটা অঙ্কের অর্থ, যা মূলত জনগণের প্রদেয় ট্যাক্সের টাকা, গচ্চা যাচ্ছে। তাদের মতে, বেদখল ও ভরাট হয়ে যাওয়া খাল পুনরুদ্ধার করাই হচ্ছে নগরবাসীর এ সমস্যা থেকে মুক্তির পথ। পাশাপাশি নগরীর নর্দমাগুলোও সংস্কার করে পানি নিষ্কাশনের উপযোগী করতে হবে।
আমরা বহুদিন ধরেই বলে আসছি, নর্দমা ও খালগুলোর সঙ্গে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর সংযোগ সৃষ্টি করা খুবই জরুরি। অন্যথায় বৃষ্টিপাতে, বিশেষ করে বর্ষাকালে, ভয়াবহ জলাবদ্ধতার পুনরাবৃত্তি হবে। পরিতাপের বিষয়, নগরবাসীর চোখের সামনেই ঢাকার খাল, নর্দমা ও জলাধারগুলো নানাভাবে দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে শত শত পুকুরও। বিগত সরকারগুলো বিভিন্ন সময়ে নদী-খাল উদ্ধারে বিচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করলেও সুফল মেলার নজির নেই। বোঝাই যাচ্ছে, এ কাজে তদারকিতে থাকা সংস্থাগুলো আন্তরিক ছিল না। এখনো নগরে যতটুকু জলাশয়, খাল, ডোবা ও নর্দমা রয়েছে, সেগুলো রক্ষায়ও প্রশাসনে কার্যত কোনো আন্তরিকতা দৃশ্যমান নয়।
নিম্নচাপের প্রভাবে যে পরিমাণ বৃষ্টি ঢাকায় হয়েছে, এতেই যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, আসছে বর্ষা মৌসুমে কী হতে পারে, তা নিয়ে আতঙ্কে নগরবাসী। এমন অবস্থায় নগরীর আশপাশের নদী-নালা দখলমুক্ত করার জন্য এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা। বেদখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি পুরো প্রক্রিয়ায় ঢাকা ওয়াসা এবং দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করাও প্রয়োজন। নর্দমা পরিষ্কারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ড্রেনেজ বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো লোক নিয়োগে কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। বর্ষার আগেই নগরের জলাবদ্ধতা দূর করতে কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট হবে, এটাই প্রত্যাশা।