ইসলাম ও ধর্ম ডেস্ক, আজনিউজ২৪: ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে দুই পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে। এ ক্ষেত্রে জোরজবরদস্তি গ্রহণযোগ্য নয়।
যেসব দ্রব্য বিক্রি করা হবে, তা সামনে থাকতে হবে অথবা তার নমুনা সামনে থাকতে হবে। অদেখা দ্রব্য দেখার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার শর্তে ক্রয় করলে এমন ক্রয়-বিক্রয় বৈধ।
বিক্রীত দ্রব্যের সব অবস্থা (দোষ-ত্রুটি থাকলে তাসহ) ক্রেতাকে খুলে বলতে হবে, অন্যথায় বিক্রি শুদ্ধ হবে না এবং ক্রেতার তা ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে। দ্রব্যের দোষ না বলে ধোঁকা দিয়ে বিক্রি করা হারাম।
বিক্রেতা দ্রব্যের যে গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছিল পরে তার বিপরীত প্রমাণিত হলে, যেমন—বলেছিল রং পাকা বা অমুক কম্পানির, অথচ তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়, এ ক্ষেত্রে ক্রেতা সেটা ফেরত দেওয়ার অধিকার রাখে।
দাম স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করতে হবে। কেউ দাম অস্পষ্ট বা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ রাখলে বিক্রি শুদ্ধ হবে না।
ক্রয়ের সময় ক্রেতা যদি বলে, দু-তিন দিনের মধ্যে (তিন দিনের বেশি নয়) দ্রব্যটি গ্রহণ বা বর্জনের কথা জানাব অথবা ঘরে দেখিয়ে পরে বলব, তাহলে ওই মেয়াদের মধ্যে ক্রেতার তা ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে, যদি ক্রেতা দ্রব্যটি ব্যবহার করে না থাকে কিংবা যেসব দ্রব্য ব্যবহার করা ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না, সেগুলো ব্যবহারের ফলে দ্রব্যটির মাঝে কোনো দোষ-ত্রুটি সৃষ্টি না হয়ে থাকে।
বিক্রেতা কোনো দ্রব্যের বিশেষ গুণাগুণ বর্ণনা করেছে, কিন্তু অন্ধকারের কারণে ক্রেতা ভালো করে দেখে নিতে পারল না কিংবা শুধু বিক্রেতার বর্ণনার ভিত্তিতে সে ক্রয় করল, কিন্তু পরে নেওয়ার পর বিক্রেতার বর্ণনা অনুযায়ী পেল না, তাহলে সেটা ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে। নমুনা দেখে অর্ডার করার পর নমুনা অনুযায়ী পণ্য না পেলেও তা ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে। অবশ্য দ্রব্যটি ব্যবহার করলে পরে আর তা ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে না।
কোনো দ্রব্য না দেখে ক্রয় করে থাকলে দেখার পর তা রাখা বা না রাখার অধিকার থাকবে।
বিক্রেতা যদি কোনো দ্রব্যের সে পরিমাণ দাম নিয়ে থাকে, যা কোনো স্বচ্ছ-নির্দোষ দ্রব্যের বিনিময়ে নেওয়া হয়ে থাকে, আর পরে তাতে কোনো দোষ প্রকাশ পায় তাহলে ক্রেতার তা ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে। যদি বিক্রেতার কাছে দোষ প্রকাশ পায় তাহলে ক্রেতার তা ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে। যদি ক্রেতা দোষ-ত্রুটি বলা সত্ত্বেও কেউ সে দ্রব্য ক্রয় করে ওই দোষ-ত্রুটির কারণে তার ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে না।
ক্রেতার হাতে এসে কোনো ত্রুটি সৃষ্টি হলে সে দ্রব্য ফেরত দেওয়ার অধিকার নষ্ট হয়ে যায়।
ত্রুটি প্রকাশ পাওয়ার পর কিছু (ভালোটা) রেখে বাকিটা (খারাপগুলো) ফেরত দেওয়ার অধিকার নেই।
রাখলে পুরোটা রাখতে হবে কিংবা পুরোটা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য বিক্রেতা সম্মত হলে সব ধরনের করা যেতে পারে।
যেসব দ্রব্য ভাঙার পর (যেমন ডিম) বা কাটার পর (যেমন তরমুজ) ভালো-মন্দ বোঝা যায়, সেসব দ্রব্য ভাঙা বা কাটার পর যদি সম্পূর্ণ ফেলে দেওয়ার মতো অবস্থা দেখা যায়, তাহলে পুরো দাম ফেরত নেওয়ার অধিকার থাকবে। যদি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করার উপযোগী থাকে (যেমন—তরমুজ বা কোনো তরকারি জন্তুকে খাওয়ানের যোগ্য থাকে) তাহলে সেগুলো ফেরত না দিলে কিছু দাম কমানোর অধিকার থাকে।
ক্রয়-বিক্রয়ের সময়ে প্রথমে দাম পরিশোধ এবং পরে পণ্য হস্তান্তর হবে। ক্রেতা এরূপ দাবি করতে পারবে না যে প্রথমে পণ্য দিতে ও পরে দাম নিতে পারে।
ক্রেতার কোনো দ্রব্য বিক্রি করলে ক্রেতাকে তা এমনভাবে হস্তান্তর করতে হবে, যাতে দ্রব্যটি তার আয়ত্তে নিতে কোনো ধরনের বেগ পেতে না হয়।
বিক্রেতা যদি স্বেচ্ছায় কোনো দ্রব্য বেশি পরিমাণে দিয়ে থাকে অথবা ক্রেতা মূল্য বেশি দিয়ে থাকে তাহলে কারবার চূড়ান্ত হওয়ার পর কাউকে তা ফেরত দেওয়ার জন্য বাধ্য করা যাবে না।
দাম পরিশোধসংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয়ভার ক্রেতাকে বহন করতে হবে। যেমন—মানিঅর্ডার খরচ (এমনভাবে পে-অর্ডার ও পোস্টাল অর্ডার খরচ) ইত্যাদি।
ক্রয়-বিক্রয়ের লেখা-পড়াসংক্রান্ত খরচ যেমন—দলিল রেজিস্ট্রি ব্যয় ইত্যাদি ক্রেতাকে বহন করতে হবে।
ক্রেতাকে পণ্য বুঝিয়ে দিতে যে খরচ হয়ে থাকে সেসব খরচ বিক্রেতাকে বহন করতে হবে। যেমন—মাপ বা ওজন করার ব্যয়, সম্পত্তিসংক্রান্ত কাগজপত্র না থাকলে সেগুলো সংগ্রহের ব্যয় ইত্যাদি।
ক্রেতার কাছে মালামাল পৌঁছানের পরিবহন ব্যয়, ভিপি খরচ ইত্যাদি ক্রেতাকে বহন করতে হবে তার বদান্যতা। কিন্তু বিক্রেতাকেই তা বহন করতে হবে—এরূপ শর্ত আরোপ করলে বাণিজ্য ফাসেদ (বিনষ্ট) হয়ে যাবে।
ভিপিযোগে সম্পদ পাঠালে তা যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তার দায়-দায়িত্ব বিক্রেতাকে বহন করতে হবে।
কাউকে কোনো মাল তৈরি করার অর্ডার দিলে তার পূর্ণ বিবরণ, দামদস্তুর, সরবরাহের স্থান-দিন-তারিখ, দাম পরিশোধের সময় ইত্যাদি পরিষ্কারভাবে নির্দিষ্ট হওয়া জরুরি।
যে কারবার ফাসেদ হয়ে যায়, তা ভেঙে দেওয়া উচিত। অথবা অন্তত বিক্রেতা দাম ও ক্রেতা পণ্য ব্যবহার থেকে নিজেদের বিরত রাখবে আর তা কোনো দরিদ্র অভাবীকে দিয়ে দেবে।
ইসলাসী শরিয়তে যেসব ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ নয়, সে ধরনের কোনো কেনা-বেচা সংঘটিত হলেও তা মালিককে ফেরত দেওয়া জরুরি—কোনোভাবে তাতে হস্তক্ষেপ করা বা নিজের কাজে ব্যবহার করা জায়েজ নয়।
ফল আসার আগে বা পরিপক্ব হওয়ার আগে বা আম-কাঁঠাল প্রভৃতির বাগানে বিক্রি করার যে প্রচলন আছে তা জায়েজ নয়।
যে ব্যক্তি হারাম উপায়ে কোনো সম্পদ উপার্জন করেছে তার কাছ থেকে সেটা ক্রয় করা জায়েজ নয়।
(আহকামে যিন্দেগী গ্রন্থ অবলম্বনে)