মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ।বাংলাদেশ সময় পাঁচটায় ভারমন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম ভোট দেন ভোটাররা। আজকের ভোটের ওপর নির্ভর করছে কার হাতে উঠবে বিশ্ব রাজনীতিতে মোড়ল দেশটির দায়িত্ব। তবে পপুলার ভোটের চেয়ে ইলেক্টোরাল ভোটের গুরুত্ব এই নির্বাচনে বেশি।
বিশ্বের অন্যসব গণতান্ত্রিক দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ভোটদাতারা সরাসরি প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারেন না, ভোট হয় ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামের একটি পদ্ধতির মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে মোট ৫৩৮ জন ইলেক্টর রয়েছেন। জয়ের জন্য প্রয়োজন নূন্যতম ২৭০টি ইলেক্টরাল ভোট। তাই অনেক সময়ই দেখা যায়, জনগণের ভোট বা পপুলার ভোট বেশি পেয়েও শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে কোনো প্রার্থীকে।
২০০০ ও ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এভাবেই হেরে যান দুই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, অ্যাল গোর ও হিলারি ক্লিন্টন।
১৭৮৭ সালে মার্কিন সংবিধান প্রণেতারা এই পদ্ধতি চালু করেন। ব্রিটেন থেকে যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ছিল একেবারে নতুন একটি দেশ।
সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান যখন লেখা হচ্ছিল তখন বিশালাকার দেশটিতে যোগাযোগের অভাবের ফলে জাতীয় স্তরে সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা কার্যত অসম্ভব ছিল।
মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ফাউন্ডিং ফাদার্স হিসাবে পরিচিত ব্যক্তিরা এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন যা ক্ষমতাকে একজনের হাতে কেন্দ্রীভূত করবে না। রাজতন্ত্রের মতো কাঠামো তৈরি করতে পারে এমন ব্যবস্থা থেকে তারা নিজেদেরকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন।
সংবিধান রচয়িতারা তখন ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। সংবিধান রচনার সময় কংগ্রেস এবং জনগণের সরাসরি ভোটে (পপুলার ভোট) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুটি ধারণাই বাতিল করে দেন। তাদের যুক্তি ছিল, পপুলার ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে লোকেরা তাদের স্থানীয় প্রার্থীকে ভোট দেবে এবং তার ফলে বড় অঙ্গরাজ্যগুলো আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে।
ছোট ছোট অঙ্গরাজ্যগুলো এই ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিকে সমর্থন করে কারণ এর ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলো প্রথমে এই পদ্ধতির পক্ষ নেয়। কারণ সেসময় সেখানে অনেক দাস ছিল। তাদের ভোটাধিকারও ছিল না। তবে আদম শুমারিতে তাদের গণনা করা হতো। এছাড়াও সংবিধান রচয়িতারা চাননি, রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বসে শুধু আইনপ্রণেতারা দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করুক।