আজ মুক্তি পেল অঞ্জন দত্ত অভিনীত নতুন সিনেমা ‘দেরি হয়ে গেছে’। ৪৫ বছরের ক্যারিয়ারে অভিনয় ও পরিচালনা মিলিয়ে এটি তাঁর ৩১তম চলচ্চিত্র। মুক্তির দিন সকালেই এক দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে নিজের অনুভূতি, অভিজ্ঞতা ও দর্শকদের প্রতি প্রত্যাশার কথা খোলামেলাভাবে তুলে ধরেন অঞ্জন।
অঞ্জন দত্ত লিখেছেন, ‘খুব বেছে বেছে কাজ নিয়েছি। চেষ্টা করেছি খুব সস্তার গান বা নিম্ন রুচির কিছু না করার। সব সময় পারিনি। তিনটি সিনেমা নিয়ে আজও আমি বিব্রত, লজ্জিত। নিজের বলে স্বীকার করে নিতে অসুবিধে হয়। রাজনীতি, বিতর্ক, ঝগড়া, বোকামি, মধ্য মেধা এড়িয়ে চলেছি। পরিস্থিতির রং যতই বেগুনি হোক। আমার বয়স ৭২। কৌতুকবোধ আমার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল।’
পোস্টে তিনি লেখেন, শীত, সকাল-বিকেলের রোদ্দুর, ফুলঘাটের স্টিমার, হুগলি নদীর সূর্যাস্ত—এসব তাঁর মন ভালো করে দেয়। একই সঙ্গে কলকাতার প্রতি নস্টালজিয়াও উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। তিনি লিখেছেন, ‘কিন্তু এরই মধ্যে কার সিনেমা কতবার অলমোস্ট হাউসফুল হয়ে রমরমিয়ে ব্যবসা করছে, সেটা প্রমাণ করবে ফেসবুক। জেদি বাছুরের মতো দর্শক কিছুতেই সিনেমা হলে যেতে চাইছে না। পর্বতপ্রমাণ প্রচার করে, যেনতেন প্রকরণে তাদের টেনে, হিঁচড়ে হলে ঢোকানোর আপ্রাণ চেষ্টা চলছে, চলবে। আমিও সেই দলে আছি। কিন্তু আমার অভিনয় হলে গিয়ে কেউ দেখতে না চাইলে আমার কিছু করার নেই। যদি দু–একজন ভুল করে ঢুকে পড়ে, তাহলে তাদের মুখের কথা আমার একমাত্র সম্বল। তা ছাড়া আমরা এমন কোনো সিনেমা বানাচ্ছি না, যেটা না দেখলে জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে। আর একটা সিনেমার জন্য জীবন ব্যর্থ বা সার্থক হবেই বা কেন? আমরা তো কেউ যুগান্তকারী কিছু বানাচ্ছি না।’
সংবাদমাধ্যম ও চলচ্চিত্র সমালোচকদের প্রভাব নিয়েও স্পষ্ট মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, মিডিয়া বা সাংবাদিকদের লেখার ধার বা দাম এতটাই কম যে তারা গাদা গুচ্ছের লিখে গেলেও দর্শক হলমুখী হবে না। তিনি লিখেছেন, ‘আমরা কয়েকজন চেষ্টা করে যাচ্ছি একটু ভালো সিনেমা করার। কারণ, এটা করেই আমাদের রোজগার। সাংবাদিক বা পডকাস্টের দলবল চেষ্টা করছে বাজার ঠান্ডা বা গরম করার। পোস্টারের ওপরে পোস্টার পড়ে যাচ্ছে। সবই বাসী খবর।’
দর্শকদের উদ্দেশে অঞ্জন লিখেছেন, ‘তবে এটাও ঠিক যে আপনারা অর্থাৎ দর্শকদের হাতে একদম সময় নেই বা আপনাদের পকেট গড়ের মাঠ, এ রকম আদৌ নয়। আপনারাও কিন্তু চাইলে কিছুক্ষণের জন্য নিজেদের টেলিফোনটা বন্ধ করে ফেলতে পারেন। সর্বক্ষণ ওটা নিয়ে গেম খেলা, একই রান্নার একই রেসিপি দেখা, কী করলে রোগা হবেন, হজম শক্তি বাড়বে, কোথায় ধস নামল, কে ছাদে উঠে নাচ্ছে, কে কী গোগ্রাসে খাচ্ছে, আগামী সপ্তাহে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে কি না, সেই নিয়ে কারুর বাতেলা শোনা এসব কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে একটু ভেবে দেখতে পারেন, আপনার পছন্দ হতে পারে এ রকম একটা সিনেমার হলে ঢুকবেন কি না। বিশাল কোনো ক্ষতি হবে না।’
দর্শকদের প্রতি একটি অনুরোধও রেখেছেন অঞ্জন। বলেন, ‘নিজের পছন্দটা ঠিক করতে হবে। আমি লিখছি বলে নয়। আমি একটা প্রস্তাব দিচ্ছি মাত্র। নিজের পছন্দ নির্ধারিত করার। যা চলছে তার মধ্যে কিসসু পছন্দ না হলে ফোনটা নিয়েই থাকুন। কোনো সমস্যা নেই। আমারও বেশির ভাগ সময় হলে যেতে ইচ্ছে করে না। কারণ, আমার কোনোটাই পছন্দ হচ্ছে না। কিন্তু যদি পছন্দ হয় বা ইচ্ছে করে, তাহলে ঢুকে পড়ুন।’
নতুন ছবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের সিনেমার নাম “দেরি হয়ে গেছে”। নামটা শুনে দেরি করে দেখব ভাবলে দেখতে পারবেন না, কারণ দেরি না করেই উঠে যাবে…মমতা শঙ্কর, আমার মতে, তার ইদানীংকালের শ্রেষ্ঠ অভিনয় করেছেন…আমি একটা রবীন্দ্রনাথের গান গেয়েছি শ্রাবণী সেনের সঙ্গে। গপ্পোটা মন্দ নয়।’
শেষে দর্শকদের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘টেলিফোন বন্ধ করবেন না করবেন না?’
