কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) জনসভায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনকে অশালীন ভাষায় সম্বোধন করে বক্তব্য দিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব আহসান হাবিব (লিংকন)। এ ছাড়া তিনি জনসভায় স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও বিষোদ্গার করেছেন।
৩৬ মিনিটের ওই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় বিএনপি নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের সমর্থকেরা ঝাড়ুমিছিল করেছেন। এ সময় জাতীয় যুব সংহতির পৌর কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। এরপর আহসান হাবিবের (লিংকন) বাড়ির সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার আমলা ইউনিয়নের আমলা বাজারে জনসভার আয়োজন করেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। আমলা ইউনিয়নের সভাপতি বিল্লাল হোসেনের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনটির মহাসচিব আহসান হাবিব। সেখানে তিনি বক্তব্য দেন।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সভার ৩২ মিনিটের দিকে আহসান হাবিব কেন্দ্রীয় বিএনপির নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের নাম ধরে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘মাদারগাছে বেশি ঘষবেন না। আপনি তারেক রহমানের কাছে সেলিমা রহমানের মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আমি নাকি ২০১৮ সালে ভোট বিক্রি করে দিয়েছি।’ এ সময় ফরিদা ইয়াসমিনকে অশালীন ভাষায় সম্বোধন করে আহসান হাবিব বলেন, ‘আমি যদি ভোট বিক্রি করে দিই, তাহলে সর্বোচ্চ ভোট পেলাম কীভাবে?’
এদিকে অশালীন সম্বোধনের প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল রাতে ভেড়ামারা শহরে মোটরসাইকেল নিয়ে ঝাড়ুমিছিল করেছেন ফরিদা ইয়াসমিনের সমর্থকেরা। তাঁরা আহসান হাবিবের অফিস ও বাড়ির সামনে গিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর পরেই তাঁর বাড়ির সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা জোরদার করতে দেখা যায়।
এ ঘটনায় রাতে জাতীয় যুব সংহতি ভেড়ামারা পৌর শাখার কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। কার্যালয়টি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন বিশ্বাস বলেন, ফরিদা ইয়াসমিনের সন্ত্রাসী বাহিনী যুব সংহতির অফিস ভাঙচুর করেছে। প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে।
জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিবের অশালীন বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপি নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘একটি পার্টির মহাসচিব, তিনি শিষ্টাচার–বহির্ভূত বক্তব্য দিয়েছেন, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি বিষয়টি কেন্দ্রীয় এবং জেলার নেতাদের জানিয়েছি। আমি মানহানির মামলা করতে চাই। তিনি (লিংকন) মিথ্যাচার করেছেন।’
জনসভায় বিএনপি নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিনকে নিয়ে একটি কটূক্তি করেছি। সেটা স্লিপ অব টাং। ফরিদা আমার ছোট বোন। আমার ভুলের জন্য নিঃর্শত ক্ষমা চাচ্ছি; দুঃখ প্রকাশ করছি।
আহসান হাবিব (লিংকন), মহাসচিব, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন ওই বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। আমরা সেটি দেখেছি। আহসান হাবিব লিংকন বিএনপির কেউ নন। তিনি বিএনপির নেতা-নেত্রীদের নিয়ে এমন কথা বলতে পারেন না। এ বিষয়ে দল থেকে যতটুকু করার তা করা হবে।’
পরে ওই বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন আহসান হাবিব। তিনি আজ বুধবার বলেন, ‘আমার গতকালের (মঙ্গলবার) জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। সেখানে ভিড়ের মধ্যে আমার শ্যালকসহ পরিচিত বেশ কয়েকজনের দামি মোবাইল ফোন চুরি হয়। একটার পর একটা দুঃসংবাদে আমি ভেঙে পড়েছিলাম। জনসভায় বিএনপি নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিনকে নিয়ে একটি কটূক্তি করেছি। সেটা স্লিপ অব টাং। ফরিদা আমার ছোট বোন। তিনি আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি সুবক্তা। আমার ভুলের জন্য নিঃর্শত ক্ষমা চাচ্ছি; দুঃখ প্রকাশ করছি।’ জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস্) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ভেড়ামারায় রাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। ভাঙচুরের ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। বর্তমানে সেখানে পরিস্থিতি শান্ত।
আহসান হাবিব জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কুষ্টিয়া জেলার সভাপতি ছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টির হয়ে ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে ২০ দলীয় জোটের শরিক কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনে ২০–দলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন আহসান হাবিব। এবারও তিনি জোট থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।
অপর দিকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন একই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁদের দুজনের বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায়।