বিগত সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে ভয়ানক বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। এরা এখন রীতিমতো আতঙ্কের নাম। গ্যাংয়ের সদস্যরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে লিপ্ত। নিজ এলাকায় প্রভাব বাড়াতে একদল আরেক দলের সঙ্গে ভয়ংকর সংঘাতেও লিপ্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে বলছেন, আইন প্রয়োগ বা সংশোধনমূলক শাস্তি দিয়েই কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব নয়; দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই অপরাধী দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চতুর্মুখী সমাধানের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক চর্চা ও পারিবারিক বন্ধন জোরদারের মতো বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া প্রান্তিক পরিবারগুলোকে আর্থসামাজিক সহায়তা, সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং ক্ষমতাবানদের পৃষ্ঠপোষকতা দমনের মাধ্যমে কিশোর গ্যাং সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান করতে হবে।
একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শক্তির চর্চা অনুষঙ্গ হওয়ায় অপরাধীদের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এই রাজনৈতিক সংযোগের কারণে অপরাধী বা গ্যাং গ্রুপ স্থায়ী রূপ পেয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যখন ক্ষমতার পালাবদল হয়, তখন ওই অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণের হাতও বদল হয়ে যায়। আবার এটাও সত্য, রাজধানীতে কিশোর-কিশোরীদের সুস্থ বিনোদনের জায়গাগুলো, যেমন খেলার মাঠ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও, সমাজে পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুশাসনেরও অভাব দেখা দিচ্ছে। এসব কারণে তাদের মধ্যে ধৈর্য ধারণের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এতে কিশোর গ্যাংগুলো সহজেই সক্রিয় হয়ে উঠছে এবং নানাভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
আমরা মনে করি, এ সমস্যার সমাধান করতে হলে শিশুর মানসিক বিকাশে পারিবারিক, সামাজিক, সর্বোপরি রাষ্ট্রীয়ভাবে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা, শিশুদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কর্মোপযোগী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তাদের একটা ন্যূনতম জীবনযাপনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়াও জরুরি। একইসঙ্গে তাদের সরাসরি অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত না করে সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে উদ্যোগ নিতে হবে। যারা গডফাদার হিসাবে এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে নিতে হবে আইনগত ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। যারা দেশের নীতিনির্ধারক, তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন, এটাই কাম্য।