সাজিদুল ইসলাম ব্যুরো চীফ (সৌদি আরব), এইউজেডনিউজ২৪: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী কোভিট-১৯ এ আক্রান্ত হয় ,ইতোমধ্যে প্রায় হাজারো প্রবাসী করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রবাসীদের বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাতৃভাষায় চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গঠিত প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার এর সৌদিআরব স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ এবং পরবর্তী করণীয় বিষয়ক সভা সৌদি সময় সন্ধ্যা ৭ টায় অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সৌদিআরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব গোলাম মসিহ্ । অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত সভায় সৌদি দূতাবাসের মাননীয় ইকোনমিক মিনিষ্টার জনাব ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান, এটুআই, আইসিটি বিভাগের এর চীফ ই-গভর্ন্যান্স স্ট্র্যাটিজিস্ট ও প্রবাসবন্ধু কল সেন্টারের প্রধান সমন্বয়ক জনাব ফরহাদ জাহিদ শেখ এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক নুরুন আক্তারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ, সেবাগ্রহিতা, প্রবাসবন্ধু কল সেন্টারের সেবা প্রদানকারী ডাক্তারবৃন্দ, সৌদিআরবে অবস্থানরত সন্মানিত কমিউনিটি লিডার প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, কারিগরি সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং এটুআই এর অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। সভাটি সঞ্চালনা করেন এটুআই প্রোগ্রামের ক্যাপাসিটি ডেভলপমেন্ট এক্সপার্ট জনাব অশোক বিশ্বাস।
সভায় উপস্থিত সাংবাদিক জনাব এম ওয়াই আলাউদ্দিন, সৌদি আরব চ্যানেল আই এর প্রতিনিধি বলেন, প্রচারে আমরা পিছিয়ে আছি, প্রত্যাশা অনুযায়ী কল পাওয়ার জন্য অধিক প্রচারনার জন্য বাংলাদেশের প্রথম সারির স্যাটেলাইট চ্যানেল গুলোতে প্রচারণা প্রয়োজন। তিনি মান্যবর রাষ্টদুত কে সদয় বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানান, বাজেট থাকলে প্রবাসীদের ঔষধ সরবরাহ, এম্বুলেন্স সরবরাহ করার। এছাড়া, জনাব নাসির উদ্দিন সরকার কল সেন্টারটির অরো বেশি প্রচারণার জন্য সৌদি আরবের বড় কোম্পানীগুলো যেখানে অধিক সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ করেন সেখানে লিফলেট বিলি করার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। প্রচরণা বাড়ানোর জন্য স্থানীয় টিভি চ্যানেল গুলোকে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া দূতাবাসের একটি নিজস্ব ফেসবুক খুলে সেটার মাধ্যমে প্রচরণা করা যেতে পারে বলেও উল্লেখ করেন এবং ইউটিউব বা what’s app গ্রুপ, ইমো গ্রুপ গুলোর মাধ্যমেও প্রচরণা চালানোর পরামর্শ দেন। সেবাগ্রহিতারা প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার সম্পর্কে তাদের অভিমত, সমস্যা এবং মতামত উপস্থাপন করেন ,তারা জানান সেবাটি পেতে তাদের কারো কারো একাধিকবার কল করতে এবং দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। অনেকেই আবার সহজেই সেবা নিয়েছেন। ঔষধ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পত্র না থাকায় ঔষধ সংগ্রহ করতে সমস্যা হয়। সেবাগ্রহিতারা জানান কল করে সরাসরি কোন ডাক্তারের সাথে কথা না বলতে পারার কারনে মাঝে মাঝে রোগীদের কিছুটা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কল সেন্টারে সেবা প্রদানে তারা এজেন্টের পরিবর্তে ডাক্তার বসানোর পরামর্শ দেন। সেবা নেওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় । এটা কমানোর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে বলে তারা জানান। এখন এই কল সেন্টারের মাধ্যমে ১২ ঘণ্টা সেবা প্রদান করা হয়, এটা ২৪ ঘণ্টা করা হলে সেবা গ্রহীতারা আরো বেশি উপকৃত হবেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। ভিডিও কলের মাধ্যমেও ডাক্তাররা সেবা প্রদান করতে পারেন বলে সেবা গ্রহীতারা জানান। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে এই কল সেন্টটাটির প্রচরনার বাড়াতে হবে বলে সেবাগ্রহীতারা উল্লেখ করেন।প্রচরণা বাড়ানোর জন্য উনারা স্থানীয় টিভি চ্যানেল গুলোকে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। এছাড়া এই কল সেন্টারের মাধ্যমে অন্যন্য সেবা যেমনঃ পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য, ত্রাণ ইত্যাদি যুক্ত করলে সেবা গ্রহীতারা আরো বিশি উপকৃত হবেন বলে উল্লেখ করেন।
সেবা প্রদানকারী ডাক্তারবৃন্দ তাদের মতামত এবং পরামর্শ উপস্থাপন করেন, তারা জানান সেবা প্রদান করার পদ্ধতিটা আরো সহজীকরণ করতে হবে এবং যদি সম্ভব হয় তাহলে একটি এ্যাপের মাধ্যমে যাতে তারা সহজে সেবা প্রদান করতে পারেন সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কল সেন্টার থেকেই রোগীর সাথে ইমোতে গ্রুপ কল তৈরি করে দেওয়া।ডাক্তারদের জন্য একটি what’s app গ্রুপ খোলা এবং সেখানে অন্য ডাক্তারদের অগ্রগতি বিষয়ক পোস্ট দেওয়া যাতে অন্য ডাক্তাররা ও অধিক সেবা প্রদানে আগ্রহী হয়। তাছাড়া দূতাবাসের পক্ষ থেকে ডাক্তারদের উৎসাহ প্রদান করে এমন কিছু পদক্ষেপ/কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। কল সেন্টারে সেবা প্রদান করার জন্য বাংলাদেশি ডাক্তারদেরও যুক্ত করার পরামর্শ দেন তারা। বাংলাদেশি ডাক্তাররা ব্যবস্থাপনা পত্রে ঔষধ এর নাম লেখার জন্য ওয়েবসাইট https://www.sfda.gov.sa/en/drug/search/Pages/default.aspx থেকে ঔষধের সৌদি আরব নামটি দেখে নিতে পারবেন বলে উনারা উল্লেখ করেন। কলসেন্টারের এর প্রচরণা বাড়ানোর জন্য দূতাবাস থেকে সকল বাংলাদেশি প্রবাসীসের মোবাইলে বাংলা এসএমএস দেওয়া যেতে পারে বলে উনারা উল্লেখ করেন।
সৌদিআরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব গোলাম মসিহ্ মহোদয় শুরুতেই সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞাতা জানান। বিশেষ করে এটুআই এবং দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিষ্টার জনাব ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান মহোদয়কে। প্রবাস বন্ধু কল সেন্টারের মাধ্যমে সেবা প্রদান আরো আগে শুরু করা প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এটি ২২ লক্ষ প্রবাসীর সেবা প্রদানের জন্য ফলপ্রসূ হবে এবং কাজ করিবে। ডিজিটাল সেন্টার ৭টিতে হয়েছে আরোও ৯টিতে হবে। এলামনাইনকেও এই সেবার সাথে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করেন। তিনি প্রতি মাসে অন্ততত একবার সকলের মতামত গ্রহণের জন্য এরকম সভা আয়োজনের অনুরোধ জানা। তিনি সকলকে প্রবাসবন্ধু কল সেন্টারের সেবা প্রদান সম্প্রসারণে সম্মিলিতভাবে কাজ করার অনুরোআধ জানান।
এখানে উল্লেখিত সৌদিআরবে বসবাসরত ২২ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশীদের জরুরি স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদানে চালু করা হয় ‘প্রবাস বন্ধু কলসেন্টার। সৌদিআরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর সহযোগিতায় গত ২৯ এপ্রিল ২০২০ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ড এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এর এটুআই যৌথভাবে উদ্বোধন করেন প্রবাস বন্ধু কলসেন্টার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি এর সঞ্চালনায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ডাঃ এ কে আব্দুল মোমেন, এমপি; প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব ইমরান আহমদ, এমপি এবং সৌদিআরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব গোলাম মসিহ্। অনলাইন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এটুআই-এর চীফ ই-গভর্ন্যান্স স্ট্র্যাটিজিস্ট জনাব ফরহাদ জাহিদ শেখ প্রবাস বন্ধু কলসেন্টারের প্রেক্ষাপট, পদ্ধতি ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ক উপস্থাপনা ও কলসেন্টারের লাইভ অপারেশন প্রদর্শন করেন। অনলাইন এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম, পিএএ; পররাষ্ট্র সচিব জনাব মাসুদ বিন মোমেন; প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ সেলিম রেজা; সৌদিআরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনোমিক মিনিষ্টার ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান; ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব মোঃ হামিদুর রহমান; এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মোঃ আব্দুল মান্নান, পিএএ; এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর জনাব আনীর চৌধুরী; ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (তথ্য প্রযুক্তি, গবেষণা ও পরিকল্পনা) নুরুন আক্তার এবং দাম্মামে অবস্থিত জন হপকিনস আরামকো হেলথ কেয়ার খোবার এর কিডনি বিশেষজ্ঞ জনাব মনোজ কুমার দত্তসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ও গণমাধ্যম কর্মীগণ।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংকটকালীন পরিস্থিতিতে এই কলসেন্টারের মাধ্যমে সৌদিআরবে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের জরুরি স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান করবেন প্রবাসী বাংলাদেশী ডাক্তারগণ। এর মাধ্যমে সৌদি আরবে অবস্থানকারী যেকোন প্রবাসী একটি হান্টিং নাম্বার +৮৮ ০৯৬১১ ৯৯৯ ১১১-এর মাধ্যমে অথবা ইমো নাম্বার (ফ্রি) ০১৪০০৬১১৯৯৫, ০১৪০০৬১১৯৯৬, ০১৪০০৬১১৯৯৭, ০১৪০০৬১১৯৯৮, ০১৯৫৮১০৫০২০-এর মাধ্যমে কল করলে সেই কলটি সৌদি আরবে বাংলাদেশি ডাক্তারদের যে পুল রয়েছে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট ডাক্তারগণ আগ্রহী সেবাপ্রার্থীকে এর মাধ্যমে সৌদি সময় সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চিকিৎসা পরামর্শ দিবেন। ইতোমধ্যে ৫০+ জন সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশী ডাক্তার এ কলসেন্টারের মাধ্যমে চিকিৎসা পরামর্শ প্রদানের অঙ্গীকার নিয়ে corona.gov.bd-এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করেছেন এবং আরো প্রায় ২৫০ ডাক্তার এই সেবা প্রদানের বিষয়ে আগ্রহ প্রদান করেছেন। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য প্রবাসীগণ corona.gov.bd ওয়েবসাইট থেকেও পাবেন।