কাতারের রাজধানী দোহায় মঙ্গলবার হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের চালানো হামলা ব্যর্থ হয়েছে। আরব গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার আগে নেতারা নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলেন। তখন বৈঠকস্থলে তাঁরা মুঠোফোনগুলো রেখে যান। আর এসব ফোনের সংকেত ব্যবহার করেই হামলা চালানো হয়।
সৌদি আরবের মালিকানাধীন সংবাদপত্র আশার্ক আল-আওসাত প্রতিবেদন করেছে, নেতারা হামলার সময় মূল ভবনের (বৈঠকের স্থান) বাইরে অন্য একটি বাড়িতে ছিলেন। মূল ভবন হামলার নিশানা হওয়ায় এবং সেই সময় আলাদা স্থানে অবস্থান করায় তাঁরা বেঁচে গেছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দোহায় হামলাটি হামাসের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার বৈঠককে লক্ষ্য করে চালানো হয়। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সহসভাপতি খলিল আল-হায়া ছিলেন মূল লক্ষ্য। পশ্চিম তীরের হামাস নেতা জাহের জাবারিন ও রাজনৈতিক দপ্তরের সদস্য নিজার আওয়াদাল্লাহও প্রাথমিকভাবে নিহত হয়েছেন বলে মনে করা হয়েছিল।
আল-হায়ার পাশাপাশি সহসভাপতি খালেদ মেশালও মূল ভবনে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁরা দুজনই জীবিত আছেন।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ প্রস্তাবিত সর্বশেষ শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা করা। টাইমস অব ইসরায়েলকে কাতারের একজন অজ্ঞাত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, বৈঠকের জন্য উপস্থিত নেতারা তুরস্ক থেকে দোহায় এসেছিলেন।
হামাস দাবি করেছে, তাদের কোনো নেতা নিহত হননি। তবে ফিলিস্তিনি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আল-হায়ার ছেলে হিমাম এবং তাঁর কার্যালয়ের পরিচালক জিহাদ লাবাদ নিহত হয়েছেন।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ প্রস্তাবিত সর্বশেষ শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা করা। টাইমস অব ইসরায়েলকে একজন অজ্ঞাত কাতারি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকের জন্য উপস্থিত নেতারা তুরস্ক থেকে দোহায় এসেছিলেন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আইডিএফ এবং আইএসএ (শিন বেত) হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট একটি হামলা চালিয়েছে।’
‘বছরের পর বছর ধরে এ হামাস নেতারা সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তাঁরা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার জন্য সরাসরি দায়ী এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
‘কাতারে হামলার আগে, বেসামরিক মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে, যেমন সঠিক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার ও অতিরিক্ত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।’
‘আইডিএফ এবং আইএসএ দৃঢ়ভাবে হামাসকে পরাজিত করতে কাজ চালিয়ে যাবে।’
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-এর বারাক রাভিদ বলেন, একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা তাঁকে নিশ্চিত করেছেন, এ অভিযান ছিল ‘হামাস কর্মকর্তাদের হত্যার চেষ্টা’; যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সামিট অব ফায়ার’।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, এ অভিযান ছিল ‘হামাস কর্মকর্তাদের হত্যার চেষ্টা’; যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সামিট অব ফায়ার’।
বারাক রাভিদ, চ্যানেল ১২-এর সাংবাদিক
একই সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ হামলার ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন, যদিও কাতারের সঙ্গে তাঁর প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটন তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এ অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণের অভিযোগকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করেছে। তারা বলছে, হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে আজকের অভিযান ইসরায়েলের সম্পূর্ণ স্বাধীন উদ্যোগ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলেছে, ‘ইসরায়েল এ হামলার উদ্যোগ নিয়েছে, এটি পরিচালনা করেছে এবং এর পূর্ণ দায় নিচ্ছে।’
এদিকে এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এ অপরাধমূলক হামলা সব আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি কাতারের জনগণ ও কাতারে থাকা লোকজনের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি।’
হামলার নিন্দা জানিয়েছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘অপরাধমূলক এ হামলা সব আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি কাতারের জনগণ ও কাতারে থাকা লোকজনের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি।’
মুখপাত্র আরও বলেছেন, ‘এ হামলার আমরা শক্তভাবে নিন্দা জানাই। কাতার কখনোই এ ধরনের বেপরোয়া ইসরায়েলি আচরণ সহ্য করবে না এবং নিজের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো হামলা সহ্য করবে না।’
অবশ্য এ হামলার প্রশংসা করেছেন ইসরায়েলি রাজনীতিবিদেরা। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এটিকে ‘সঠিক সিদ্ধান্ত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।