এডিটরিয়াল ডেস্ক, এইউজেডনিউজ২৪: সবাইকে দেশের শতভাগ তরুন-তরুণীদের জন্য জনপ্রিয় ওয়েব পোর্টাল নিউজ এজেন্সী এইউজেডনিউজ টুয়োন্টি ফোর ডট কম-এর পক্ষ থেকে জানাচ্ছি হ্যাপী নিউ ইয়ার। কাঙ্ক্ষিত-অনাকাঙ্ক্ষিত ইস্যুকে পেছনে ফেলে দেশমাতৃকার ছায়াতলে উদিত হলো নতুন সূর্য-২০২০। আর এসব বিষয়গুলোকে নিয়ে স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলার মা ও মাটির ছায়াতলে জড়িত একেকটি বছর। ইংরেজি বছর নিয়ে অনেক তথ্য রয়েছে ছোট-বড় সবারই। তারপর কেন যেন অতীতকে সামনে না টানলে অনেক কিছু জানার আগ্রহে যেন কমতি থাকে।
তাই নতুন প্রজন্মকে আর দৃষ্টিগোচর করতেই এর পুনরাবৃত্তি। আলোচিত-সমালোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো গত বছরের ১২টি মাস। আর সেই সাথে ২০১৯ সালকে বিদায় দিয়ে নতুন সূর্য্য উদিত হলো। উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে পড়েছে নতুন বছরে। পৌষের হিমেল শিশিরের ঝিলিকে নতুন দিনকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে নববর্ষের আগামী বার্তাকে। কাঙ্ক্ষিত-অনাকাঙ্ক্ষিত ইস্যু নিয়ে দেশমাতৃকার ছায়াতলে জড়িত একেকটি বছর।
হোক সেটি ইংরেজি বা বাংলা; তারপরও বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষাপটে তার নিজস্ব কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরে। আমরা আজ বাস্তবসম্মত রূপ রেখায় প্রজ্জলন ঘটানোর অপেক্ষার দিকে তাকিয়ে কিছুটা স্বস্তি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে থাকি নবদিগন্তে উদিত সূর্য্যের দিকে তাকিয়ে; আর নিমজ্জিত হই তার পেছনের বিভিন্ন ঘাত,-প্রতিঘাত, লাঞ্ছনা আর বঞ্চনার সমাপ্তি ঘটিয়ে। অস্তমিত হোক সকল গ্লানি, যা দ্বারা জাতির মূল্য আর অস্তিত্ববোধকে কিছুটা সামাল দিয়ে যেকোনো অপশক্তিকে ধূীলস্মাৎ করে।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসেই ছিলো বিজয়ের বড় অর্জন। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধ ছিলো বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার শিক্ষক, কবি, লেখক, সাহিত্যিকসহ ৩০ লাখ আপামর জনতার রক্তে অর্জিত লাল-সবুজের নিশানের মধ্য দিয়ে। আজ আমরা স্বাধীন।
৪৮ বছর পর গৌরবময় বাংলাদেশের অনেক বড় অর্জন ছিলো ইংরেজি বছরের শেষ মাসটি দিয়ে। মানুষ-সত্তা বিকাশের জন্য অপরিহার্য্য ও অবিচ্ছেদ্য অধিকারগুলোর বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের অঙ্গীকারকে সাধুবাদ জানিয়ে নতুন বছরের অঙ্গীকার।
হয়তো এই বাক্যগুলোর পেছনে কিংবা সামনে অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে, যার আদলে মানসিকতাকে বিকশিত করার মতো শক্তি সারসংক্ষেপে-ই শ্রেয়। দেশবিরোধী সকল অপশক্তিকে পুরোপুরি ধ্বংস করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে প্রতিটি জাতি তার সঠিক দাবি-দাওয়ার উন্মেষ ঘটাবে বিশ্বের মানচিত্রে, বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন রেকর্ড সৃষ্টি করে।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে আর গতিশীল করার শক্তি নিয়ে সামনের পথচলা তাই একটি দেশ ও জাতি তার ১২টি মাসের শেষ মুহূর্তটিকে বিদায় দিয়ে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে এবারের বহুল আলোচিত আর সমালোচিত অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে।
প্রযুক্তির যুগে তাই ইংরেজি সালের উইকিপিডিয়ার সূত্র ধরে এবার চলে আসি পেছনের দিকে। নতুন করে বরণ করে নিতে বরবারই ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ উদযাপন করার রীতি নিয়ে। বেশি দিন হয়নি, যখন থেকে এই তারিখ সর্বজনীনভাবে নববর্ষ হিসেবে গৃহীত হয়ে আসছে।
এই রীতিটি এসেছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে, যেখানে বছরের শুরু হয় ১ জানুয়ারি থেকে। বিশ্বের যেসকল দেশ এই ক্যালেন্ডারকে সিভিল ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করেছে, তারা সবাই ইংরেজি নববর্ষ পালন করে থাকে।
তবে অনেক দেশই ক্যালেন্ডারটি গ্রহণ করার আগে নববর্ষের রীতিটি গ্রহণ করেছে। যেমন— ১৬০০ সালে স্কটল্যান্ড এবং ১৭৫২ সাল থেকে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ব্রিটিশ কলোনিগুলো নববর্ষের রীতি অনুসরণ করতে শুরু করে।
কিন্তু তারা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে পরিচিত হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে! বিভিন্ন সূত্রমতে, আধুনিক বিশ্বে নববর্ষ হিসেবে পহেলা জানুয়ারিকে প্রচলিত করার ব্যাপারে ‘রিপাবলিক অব ভেনিস’ (দেশটি ১৭৯৭ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কারণ তারা ১৫২২ সাল থেকে এ দিনকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনা করতে শুরু করে। এরপর ১৫৫৬ সালে স্পেন, পর্তুগাল, সুইডেন, ১৫৬৪ সালে ফ্রান্স, ১৭০০ সাল থেকে রাশিয়া এই রীতি অনুসরণ শুরু করে।
ব্যতিক্রম সব জায়গায়ই আছে। যেমন— ইসরায়েল। এই দেশটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে থাকলেও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। কারণ বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী অযিহুদি (non jewish) উৎস থেকে উৎপন্ন এই রীতি পালনের বিরোধিতা করে থাকে। আবার কিছু কিছু দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণ করেনি। যেমন— সৌদি আরব, নেপাল, ইরান, ইথিওপিয়া এবং আফগানিস্তান।
এসব দেশ ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। প্রথম রোমান ক্যালেন্ডারটি ছিলো চন্দ্রকেন্দ্রিক এবং এতে মাস ছিলো ১০টি। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের প্রথম মাসটি ছিলো মার্চ। তাই তখন ১ মার্চ বছর শুরু দিন হিসেবে উদযাপন করা হতো। ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমের রাজা নুমা পম্পিলিয়াস এই ক্যালেন্ডারে নতুন দুটি মাস যুক্ত করেন জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি।
এরপর জড়সধহ ঈড়হংঁষ-এর ইচ্ছানুযায়ী, বছরের প্রথম মাস মার্চ থেকে জানুয়ারিতে পরিবর্তন করা হয়। তবে ১ জানুয়ারিরকে নববর্ষ হিসেবে চালু করতে বেশ সময় লাগে। এটি প্রথম চালু হয় ১৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, রোমে। তখন এটি অনিয়মিতভাবে পালিত হতো।
কারণ তখনো বিভিন্ন স্থানে জনগণ ১ মার্চকে নববর্ষ শুরু দিন হিসেবে ব্যবহার করতো। কিন্তু ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমসম্রাট জুলিয়াস সিজার যখন সূর্যকেন্দ্রিক ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ চালু করেন, তখন ১ জানুয়ারিকেই নববর্ষে প্রথম দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মূলত তখন থেকেই এই রীতি ছড়িয়ে পড়ে।
খ্রিস্টীয় দশম শতকের শেষে বা দ্বিতীয় সহস্রাব্দের শুরুতে ভারত ও চীনে যে সভ্য সমাজগুলো ছিলো তারা নিঃসন্দেহে সমকালীন ইউরোপীয় সভ্যতা থেকে অনেক অগ্রসর ছিলো, যদিও ক্ষয়, বন্ধ্যাত্ব ও সহিষ্ণুতার অভাব এদের, বিশেষ ভাবে ভারতের, প্রাণশক্তিকে ধীরে ধীরে নিস্তেজ করে দিচ্ছিল। মধ্যপ্রাচ্যে, উত্তর আফ্রিকায় ও স্পেনে তখন মুসলিম সভ্যতা উদয়ের আলোয় উদ্ভাসিত।
এই সভ্যতা তখন যেখানে যা কিছু মহৎ ও বরণীয় পেয়েছে, তা দুহাতে অকাতরে গ্রহণ করেছে। শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সহস্রাব্দের শেষ ২০০ বছরে সারা বিশ্বকে এমনভাবে রূপান্তর করলো যে, গত পাঁচ হাজার বছরের মানবসভ্যতা ও সংস্কৃতির সঙ্গে এই নব-উদ্ভূত সভ্যতার আর কোনো মিল বা সাযুজ্যই রইলো না।
দু’হাজার বছর আগে জন্মানো কোনো গ্রিক বা ইতালীয় যদি কোনো অলৌকিক কারণে ২০০ বছর আগে ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে সশরীরে পৃথিবীতে ফিরতে পারতেন, সেই পৃথিবী তার কাছে খুব বেশি অচেনা মনে হতো না, কিন্তু আজকের পৃথিবীতে এলে তিনি বিস্ময়াবিমূঢ় ও হতবাক হতেন, এই পৃথিবীর সবকিছুই তার অজানা ও অচেনা মনে হতো। গত ৫০০ বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে অগ্রযাত্রা হয়েছে, তা আমাদের মনোজগতের যে ব্যাপ্তি ঘটিয়েছে, তা অচিন্তনীয় ও অবর্ণনীয়।
কোপার্নিকাস, কেপলার, গ্যালিলিও, নিউটন, আইনস্টাইন, মাদাম কুরি, বোর, হাইসেনবার্গ, স্রডিংগার, ডিরাক প্রমুখের অসাধারণ অধ্যবসায় ও আবিষ্কারের ফলে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের বিরাটত্ব ও বিশালত্বের উপলব্ধিতে আমাদের কল্পনাই কেবল মূর্ছিত হয় না, তার মধ্যে অনির্দেশ্য ও অসীমতার পরিচয়েও আমরা অতলান্তের বার্তা পাই।
এই আবিষ্কারগুলো আমাদের একই সঙ্গে দাঁড় করিয়ে দেয় বিরাট সৃষ্টি ও বিশাল ধ্বংসের মুখোমুখি। আমাদের যে সমাজ ও রাষ্ট্রজীবন সেখানেও গত হাজার বছরে ইউরোপের মাধ্যমে আমাদের হারানোর পরিমাণ যেমন বিরাট, প্রাপ্তিও খুব কম নয়। গত এক হাজার বছরের ইতিহাস, পাশ্চাত্যের জয়যাত্রার ইতিহাস।
কিন্তু এই ইতিহাস নিরবচ্ছিন্ন আলোর ইতিহাস নয়। এই ইতিহাস, বিশেষত শেষার্ধের ৫০০ বছরের ইতিহাস হলো পুঁজিবাদের ইতিহাস। এই ইতিহাসের বিরাট আলো অধ্যায় হলো— সারা বিশ্বের বিরাটসংখ্যক মানুষকে, বিশেষভাবে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার ঔপনিবেশিক ও নয়া-ঔপনিবেশিক শোষণের ক্রুর বিস্তারবিহীন জালে আবদ্ধ করা।
পরিশেষে, বছরের শুরুতে সবাই যেন মনে রাখি আমরা আমাদের স্বত্বাকে কোনোভাবেই যেন বিসর্জিত না দেই। আনন্দ আর উল্লাসে সীমা অতিক্রম করে উগ্রতায় যেন মেতে না উঠি। যা বিপদ ডেকে আনবে, নিজেকে করবে হেয় এমন কিছুই যেন আমরা না করি। পুরনো বছরের সব গ্লানি মুছে নতুন বছরকে সাদরে বরণ করে নিতে সাড়ে ষোল কোটি বাঙালির প্রতি জানাই ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’।
আমরা আমাদের অনৈতিক আচরণ ও পশুত্বকে যেন বিদায়ী বছরের সাথেই জলাঞ্জলি দিয়ে দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি। এই হোক নতুন বছরে আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা। পুরনো বছরের সব ব্যর্থতা ও অপ্রাপ্তি ভুলে নতুন বছরে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে দেশ…এই প্রত্যাশায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ। স্বাগত ২০২০-বিদায় ২০১৯।