

আমরা বর্তমান সময়কালের বিশ্ববাসী কেউই এমন বৈশ্বিক মহামারী বা অতিমারী প্রত্যক্ষ করিনি। বিগত ১৯২০ সালে বা তার পূর্বে জন্ম নেওয়া মানুষ কেউ এই পৃথিবীতে সম্ভবত বেচে নেই। সুতরাং এই বৈশ্বিক মহামারী বা অতিমারী প্রত্যক্ষভাবে মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা এই পৃথিবী বাসী কারো থাকার কথা নয় পূথিগত বিদ্যা ছাড়া । সুতরাং সমগ্র পৃথিবীবাসী আজ এই করোনার আগ্রাসনে ভীত সন্ত্রস্থ ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে। এই রোগকে মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম পদ্ধতির কথা শোনা যাচ্ছে।
প্রথমত: এই রোগ যখন ছড়ায় তখন অনেকে বলেছিল এই ভাইরাস শীত প্রধান দেশে যেভাবে বিস্তারলাভ করতে পারছে সেভাবে আমাদের মত গ্রীষ্ম প্রধান দেশে বিস্তারলাভ করতে পারবে না। কিন্ত এই কথা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। এই ভাইরাসের প্রথম ধাক্কা আমরা বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে মোকাবেলা করেছি এবং কিভাবে করতে পারতাম তা ভবিষ্যতের মানুষ বিশ্লেষণ করবে। অতীতের অতিমারীর ভাইরাস বা জীবানু থেকে এই কোভিড ১৯ এর ভাইরাসের আগ্রাসন ও তার ফলে সমাজের উপর সৃষ্ট প্রভাব সম্পূর্ণ আলাদা । পূর্বের মহামারীর ভাইরাস বা জীবানু এভাবে মানুষকে সমাজচ্যূৎ করেনি। এবারের করোনা ভাইরাসে মানুষের সামাজিক জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে । কেউ কারো সাথে মিশতে পারবে না ৬ ফুট দুরে থাকতে হবে। কারো সঙ্গে করমর্দন করা যাবে না। কোলাকুলি করা যাবে না। পায়ে হাত দিয়ে সালাম / প্রনাম করা যাবে না। কারো বাড়ীতে খাওয়া যাবেনা। সামাজিক অনুষ্ঠান করা যাবে না । এমনকি মসজিদ / মন্দিরেও যাওয়া যাবে না। এটা মনে হয় মানব সমাজের প্রতি প্রকৃতির একটি প্রতিশোধ । কেননা আমরা যে সমস্ত সামাজিক অনুষ্ঠান করি তা কি মন থেকে করি ? দাওয়াত করে কাউকে খাওয়ালে যাওয়ার পরে বললো খাবারে ঝাল বেশী হয়েছে বা লবন বেশী হয়েছে ইত্যাদি। বিবাহ অনুষ্ঠানে দাওয়াত করে খাওয়ানো হলো বর বধুকে আর্শিবাদ / দোয়া করার জন্য। খেয়ে দেয়ে দোয়া করা তো দূরের কথা মনে মনে বলে ব্যাটা কয়দিন আগে রাস্তা দিয়ে ঘুরতো ছেলের বিয়েতে এত টাকা খরচ করলো কি করে ? এই করোনা ভাইরাস মানুষের মনের কথাই বাস্তবায়িত করেছে। পুরো মানব সমাজকে অসামাজিক করে দিয়েছে, ঘরে আবদ্ধ করে দিয়েছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে এখন সবার মুখে মাস্ক। রাতারাতি সমস্ত মানুষ নারী পূরুষ নির্বিশেষে লজ্জাবনত হয়ে গেছে। আগে আমাদের সমাজে বড়ভাইকে দেখলে ছোট ভাই এর বৌ লজ্জায় মুখে কাপড় দিতো । প্রকৃতির এমনই প্রতিশোধ করোনা ভাইরাস আজ নারী পূরুষ নির্বিশেষে সবাইকে লজ্জাবনত করেছে। পৃথিবীর এক শ্রেনীর মানুষ লজ্জাহীনভাবে পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষকে অভুক্ত ও পূষ্টিহীন রেখে মঙ্গলগ্রহে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করে, প্রচুর খরচ করে পারমানবিক মারনাস্ত্র তৈরী করে। এই লজ্জাহীন মানুষ গুলোকে কোভিড ১৯ লজ্জাবনত করে ছেড়েছে।
বাংলাদেশে কোভিড ১৯ এর আগ্রাসন দেরীতে এসেছে। আমাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে আমরা এই আগ্রাসনকে যথাসাধ্য মোকাবেলা করে চলেছি। আমাদের জনগনও এর সাথে অভ্যস্ত নয়। আমাদের দেশের জনগন চরিত্রগতভাবে সামাজিক। তাছাড়া পৃথিবীতে সবচেয়ে ঘন বসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে লোকবাস করে ১২০০, ভারতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫০০ ও চীনে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪০০ জন। সুতরাং আমাদের জনগণ ঢাকা শহরে ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দাড়ালেই একজনের শরীরের সঙ্গে অন্যের শরীর স্পর্শ কর।
ডক্টর শ্রী বীরেন শিকদার
সাবেক প্রতিমন্ত্রী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
মাননীয় এমপি মাগুরা -২ আসন
সাবেক প্রতিমন্ত্রী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
মাননীয় এমপি মাগুরা -২ আসন