প্রতিদিন বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। কলকাতায় পূজার আগে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ রুপি। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে পুজার পরে সেই দাম গিয়ে ঠেকেছে কেজি প্রতি ৭০ রুপি আবার কোথাও ৮০রুপিতেও বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
রাজ্য সরকার পরিচালিত মাদার ডেয়ারিতে শনিবার প্রতি কিলোগ্রাম পেঁয়াজ মিলেছে ৬৭ টাকায়। ই-কমার্স পোর্টাল বিগবাস্কেটেও ৬৭ টাকায় বিকিয়েছে পেঁয়াজ। কলকাতার বাইরে শুক্রবার দিল্লিতেও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ৬৫-৮০ টাকা। উত্তর-পূর্বের ত্রিপুরায় শুক্রবার পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৯০ রুপি। বিক্রেতারা বলছে আসন্ন দেওয়ালির সময় রান্নাঘরের অত্যাবশ্য এই পণ্যটির দাম আরও বাড়তে পারে। অন্যদিকে আচমকা এমন অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে দিশেহারা ক্রেতারা।
চলতি উৎসবের মৌসুমে বাড়তে থাকা চাহিদা ও জোগানের ঘাটতির মেলবন্ধনের কারণেই মূলত তৈরি হয়েছে এহেন পরিস্থিতির। রাজ্যে রাজ্যে নো এন্ট্রির জেরে ঢুকতে পারেনি পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক। ফলে যোগানের অভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে দাম। অন্যদিকে চলতি মৌসুমে উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা,পাঞ্জাবে ভারি বৃষ্টি এবং রাজস্থান, কর্ণাটক এবং ব্যাঙ্গালোরে অনাবৃষ্টির কারণে কমেছে পেঁয়াজের উৎপাদন। ফলে পেঁয়াজের বেশিরভাগ চাপ সামাল দিতে হচ্ছে মহারাষ্ট্রের নাসিককে। এমন অবস্থায় মরার উপর খাড়ার ঘা চাপিয়ে মহারাষ্ট্র সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির উপর ৩০ শতাংশ কর চাপিয়েছে। এরই ফলশ্রুতি দেশব্যাপী দেখা দিয়েছে পেঁয়াজের আগুন-দাম।
কৃষিদপ্তর বলছে সময়ে নতুন ফসল বাজারে চলে এলেও এই সমস্যা হতো না। চলতি বছরে খারিফ মৌসুমে আবহাওয়ার কারণে পেঁয়াজ রোপণে দেরি হয়েছে। ফলে এই ফসল আসতেও দেরি হচ্ছে। খারিফ মরশুমের পেঁয়াজ এতদিনে বাজারে আসা শুরু হয়ে যেত। কিন্তু এবার তা হয়নি। সংরক্ষিত রবি শস্যের পেঁয়াজের স্টক কমে এসেছে। ফলে সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পাইকারি এবং খুচরা বিভাগে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বগামী হয়েছে।
কলকাতার সব থেকে বড় পেঁয়াজের আড়ৎ শিয়ালদহের কোলে মার্কেটের ব্যবসায়ী বিশাল চন্দ বলেন পূজার সময় একটানা নো এন্ট্রির জেরে দাম বেড়েছে। তাছাড়া দেশের বাজারে পেঁয়াজের ১ টনের মূল্য যেখানে ১৮০০ থেকে ১৯০০ রুপি সেটা বাংলাদেশে এক্সপোর্ট করলে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ২৪০০ রুপি। ফলে নাসিক থেকে সরাসরি পেঁয়াজ রাজ্যগুলোতে না এসে বাংলাদেশ বা অন্যান্য দেশগুলোতে রপ্তানি করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা পেঁয়াজ পাচ্ছি না তা নয় পেঁয়াজ পেলেও কোয়ালিটি খুব ভালো নয় উল্টে দাম অনেক বেশি। তারপরেও শুক্রবার পাইকারি দাম ৪০ থেকে ৫০ রুপি প্রতি কেজি। খুচরা বাজারে সেই পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। দাম নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় সরকার আবার ২৫ টাকা কেজি পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি করছে ফলে আমরা পড়েছি মহাবিপদে। পূজার আগে দিনে খুব কম হলেও ৬০ টনের পেঁয়াজ বিক্রি হতো আমাদের। বর্তমানে দাম বৃদ্ধির কারণে বাজার এতটাই পড়তির দিকে। এখন ৩০ টন পেঁয়াজ ৩ দিন ধরে বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের।
কলকাতার খুচরা বাজারগুলোতে আবার দাম বৃদ্ধির জেরে অনেক বিক্রেতাই পেঁয়াজ বিক্রিই কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। যাদের কাছে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে তারা বলছে আগের থেকে বিক্রি অনেকটাই কমেছে। দাম বৃদ্ধির জেরে ক্ষোভ বেড়েছে ক্রেতাদের মধ্যও। ক্রেতারা বলছে দাম নিয়ন্ত্রণে দ্রুত হস্তক্ষেপ করুক কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার।
বৃহস্পতিবার থেকেই অবশ্য কলকাতায় দাম নিয়ন্ত্রণে কড়া নজরদারি শুরু করেছে রাজ্যের টাস্ক ফোর্স। বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শহরের নানা বাজারে হানা দেয় টাস্ক ফোর্স। বিপুল দামে যাতে পেঁয়াজ বিক্রি করা না হয় তার জন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে।
এদিকে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে ন্যূনতম রফতানি মূল্য বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড শনিবার জানিয়েছে, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরেও দাম নিয়ন্ত্রণে না এলে প্রয়োজনে বন্ধ হতে পারে পেঁয়াজের রপ্তানি।
এদিকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে পিঁয়াজের এমন দাম বৃদ্ধিতে রাজনীতির উত্তপ্ত কড়াইতে হাত শেখতে ময়দানে নেমেছে বিরোধীরা। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে শুক্রবার কলকাতার কোলে মার্কেটের সামনে পিয়াজের গয়না পড়ে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস সেবা দল। দাম বৃদ্ধির চেয়ে পেঁয়াজ সবজি নয় সোনা, রুপোর মত অমূল্য দামি রত্নের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। কলকাতার বাইরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও পেঁয়াজের মালা পড়ে বিক্ষোভ মিছিলের শামিল হয়েছে বাম, কংগ্রেস ও তৃণমূল।