কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে উখিয়ার সোনারপাড়া এলাকায় গেলে চোখে পড়ে রঙিন চারটি নৌকা। নৌকার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে টিনশেডের ঘর। ভেতরে বেড-বিছানা, ফ্যান, বাতিসহ রয়েছে প্রয়োজনীয় আসবাব। নৌকায় ওঠানামার জন্য লাগানো হয়েছে কাঠের সিঁড়িও। নৌকার এসব ঘরে বসে দেখা যায় সাগরের দৃশ্য, করা যায় রাত্রিযাপন। এই অবকাঠামোর নাম দেওয়া হয়েছে ‘নোঙর বিচ রিসোর্ট’। তবে সবার কাছে এটি পরিচিত হয়ে উঠেছে সাম্পান রিসোর্ট নামে। রিসোর্টটির নৌকাগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে সাম্পান পট হাউস-১, ২, ৩ ও ৪। রিসোর্টে যাঁরা থাকেন, তাঁদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে ফুটবল-ভলিবল খেলা এবং সৈকত ভ্রমণের সুযোগ।
গত রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যক্তি মালিকানাধীন ১ একরের বেশি জমিতে তৈরি হয়েছে নোঙর বিচ রিসোর্ট। স্থানীয় সোনারপাড়ার দুই তরুণ মাসুদ পারভেজ ও সাজেদুল কবির এর উদ্যোক্তা। লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যবসায় নেমেছেন দুজন। সাজেদুল পড়েন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে। তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করে কখন ক্যারিয়ার গঠন করব, এই চিন্তা ঝেড়ে ফেলে এখন থেকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছি আমরা দুজন। নিজেরা চিন্তাভাবনা করে নৌকার ওপর থাকার ঘর বানিয়ে ব্যতিক্রমী সাম্পান রিসোর্ট তৈরি করেছি। এই রিসোর্ট গড়ে তুলতে দেড় বছর সময় লেগেছে। ৮ জুন থেকে রিসোর্টটি চালু হয়েছে।’
নোঙর বিচ রিসোর্টে ঢুকতেই সামনে পড়ে কাঠের তৈরি একটি রেস্তোরাঁ। সেখানে চেয়ার-টেবিল সাজানো। কয়েকজন পর্যটক সেখানে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। রেস্তোরাঁর পেছনে খোলা মাঠ। মাঠের শেষ প্রান্তে পাশাপাশি দূরত্বে নৌকার ওপর নির্মাণ করা নীল রঙের ঘরগুলো। রিসোর্টের পরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘৮৪ কিলোমিটারের মেরিন ড্রাইভের দুই পাশে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের জন্য কয়েকটি পাঁচ তারকাসহ ৪০-৪৫টি হোটেল-রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। কিন্তু নৌকার ওপর রিসোর্ট কোথাও নেই। ব্যতিক্রমী রিসোর্ট দেখে বহু পর্যটক গাড়ি থেকে নেমে নানা তথ্য জেনে নিচ্ছেন। রিসোর্টের মাধ্যমে আমরা কক্সবাজারের ঐতিহ্য সাম্পানকে তুলে ধরছি।’ তিনি আরও বলেন, রিসোর্টে যাঁরা অতিথি হচ্ছেন, তাঁদের জন্য খোলা মাঠে তাঁবু টাঙিয়ে রাতযাপনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে, যাতে শিক্ষাসফর কিংবা গবেষণার জন্য আসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কম খরচে থেকে-খেয়ে ভ্রমণ ও গবেষণার কাজ সুন্দরভাবে সামলাতে পারেন। উদ্যোক্তারা জানান, খোলা মাঠের দুই পাশে ৫টি করে ১০টি তাঁবু স্থাপনের জায়গা আছে। কেউ যদি সঙ্গে করে তাঁবু নিয়ে আসেন, তাতে ভ্রমণ খরচ আরও কমে যায়। এ ক্ষেত্রে ভেন্যু চার্জ হিসেবে দৈনিক ৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। সাম্পান কটেজে কথা হয় ফরিদপুরের চার তরুণ রনি, শাকিল, রিয়াদ ও মোক্তারের সঙ্গে। রিয়াদ বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ ঘুরতে এসে হঠাৎ রিসোর্টটি চোখে পড়ে। তারপর দামদর করে চার বন্ধু দুটি নৌকায় উঠে গেলাম। প্রতিটি রিসোর্টে (নৌকায়) এক দিনের ভাড়া, দুই বেলা খাবার, সকাল ও বিকেলের নাশতা বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে একজনের মাথাপিছু খরচ হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ মেরিন ড্রাইভের সাধারণ মানের হোটেলের কক্ষভাড়া আড়াই হাজার টাকার বেশি।
উদ্যোক্তা মাসুদ পারভেজ বলেন, সাম্পান কটেজে আপাতত বিদেশিদের থাকার সুযোগ সীমিত রাখা হয়েছে। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর বাংলাদেশিদের রিসোর্ট ভাড়া দেওয়া হয়। ঈদ উপলক্ষে এক দিনের জন্য ৩ হাজার ৬০০ টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যটকদের কাছ থেকে অগ্রিম বুকিংও পাচ্ছেন। সাজেদুল কবির বলেন, সাম্পান-নৌকার প্রতিটা রিসোর্ট তৈরিতে তাঁদের খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকার বেশি। রেস্তোরাঁসহ পুরো নোঙর বিচ রিসোর্টের পেছনে এ পর্যন্ত দুজনের বিনিয়োগ ৩৪ লাখ টাকা। জমির দাম কোটি টাকা হলেও পৈতৃক জমি বলেই কম খরচে রিসোর্ট দাঁড় কমানো সম্ভব হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রেস্তোরাঁ খোলা থাকে।