ড্র হলেও গল টেস্টটা ছিল আশা জাগানিয়া। নাজমুল হোসেন শান্তর জোড়া সেঞ্চুরি, মুশফিকুর রহীমের দেড়শ’ আর লিটন দাসের ‘প্রায়’ সেঞ্চুরির ইনিংসগুলোতে ছিল আলোর ঝলকানি। কিন্তু গল থেকে কলম্বো আসতেই নিভে গেছে সেই দ্যুতি। ব্যাটিং ব্যর্থতায় চতুর্থ দিন সাতসকালেই ইনিংস ব্যবধানে হারের সঙ্গে জুটেছে ১-০’ ব্যবধানে খোয়ানোর যন্ত্রণা। সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণায় উত্তাপ ছড়িয়েছেন শান্ত। তবে বিচক্ষণ মেহেদি হাসান মিরাজ জানেন একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেরাটা দিতে না পারলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। নতুন অধিনায়ক তাই প্রথমেই শান্তর সহযোগিতা চেয়েছেন। সব ভুলে কলম্বোতে অনুশীলনে দুজনকেই বেশ চনমনে দেখা গেছে। টেস্টের বাইরে থাকা ওয়ানডে দলের সদস্যরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে কলম্বো গেছেন। সোমবার প্রথমবারের মতো রঙিন পোশাকের সব ক্রিকেটারদের একসঙ্গে পেয়েছেন কোচ ফিল সিমন্স। কাজ করেছেন তাসকিন আহমেদ, তানজিদ তামিম, নাঈম শেখ, শামীম হোসেন পাটওয়ারীদের নিয়ে।
আগামীকাল কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডে। একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় ম্যাচ শনিবার। পাল্লেকেলেতে তৃতীয় ম্যাচ ৮ জুলাই। সব ম্যাচই ডে-নাইট। এর পর সমান তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ। মিরাজের নেতৃত্বে নতুন উদ্যমে ওয়ানডে প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলাদেশ দল। প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে কঠোর অনুশীলন করেছেন তাসকিন আহমেদ-নাহিদ রানারা। তাদের পেছনে ঘাম ঝরিয়েছেন দলের পেস বোলিং কোচ শন টেইট। বিশেষ করে নাহিদ রানার লাইন-লেন্থ নিয়ে আলাদা করে কাজ করেছেন এই অস্ট্রেলিয়ান কোচ। টেস্টে খুব একটা ভালো করতে না পারলেও ওয়ানডেতে তাকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখা যেতে পারে বলে আশাবাদী কোচিং স্টাফ।
প্রস্তুতিতে ঘাটতি রাখতে চাইছেন না দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্সও। সোমবার প্রথমবারের মতো ওয়ানডে দলের সব ক্রিকেটারকে একসঙ্গে পেয়েছেন তিনি। খেলোয়াড়দের মাঝে আত্মবিশ্বাস ফেরাতে নিয়মিত কথা বলছেন, অনুশীলনে আলাদা করে মনোযোগ দিচ্ছেন ম্যাচ সিনারি নিয়েও। সিমন্স মনে করেন, টেস্ট সিরিজের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে নতুন ফরম্যাটে খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এদিকে প্রায় দুই বছর পর কলম্বোতে ফিরেছেন ব্যাটার শামীম হোসেন। এই মাঠেই ভারতের বিপক্ষে নিজের সবশেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে ব্যর্থ হলেও এবার ঘুরে দাঁড়াতে মুখিয়ে আছেন শামীম। নেটে তার ব্যাটিং দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে-শট নির্বাচনে বেশি মনোযোগ, কম ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা ও স্ট্রাইক রোটেশনে মনোযোগ।
অনুশীলনের সময় একটি অদ্ভুত পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়েছিল প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে। মূল মাঠে প্রবেশ করতে গিয়ে বাংলাদেশ দলের কয়েক সদস্য বাধার মুখে পড়েন। মাঠের দায়িত্বে থাকা কিছু কর্মী ভেবে বসেছিলেন, মিরাজরা উইকেট দেখতে এসেছেন, অনুশীলনের জন্য নয়। পরে অবশ্য ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলে মাঠকর্মীরাই আবার টাইগারদের অনুশীলনে সহায়তা করেন। সব মিলিয়ে সাদা পোশাকে হতাশাজনক সফর শ্রীলঙ্কাতেই রাঙাতে চায় বাংলাদেশ। ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজেদের প্রিয় ছন্দে ফেরার চেষ্টায় এবার নতুন অধিনায়ক, নতুন মনোভাব এবং নতুন লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামার অপেক্ষায় মিরাজ বাহিনী। ১৯৮৬ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত মুখোমুখি ৫৭ ওয়ানডের মাত্র ১২টিতে জিততে পেরেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার জয় ৪৩ ম্যাচে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে এখনও পর্যন্ত কোনো দিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ, টুর্নামেন্ট কিংবা ত্রিদেশীয় সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। একমাত্র সিরিজ জয় ঘরের মাঠে, ২০২১ সালে, ৩ ওয়ানডের সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে। অবশ্য বিভিন্ন সময়ে শ্রীলঙ্কায় ম্যাচ জয়ের স্মৃতি আছে টাইগারদের। যার সর্বশেষটি ২০২৭ সালে, ডাম্বুলায়, মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে।
ওয়ানডে চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত টাইগাররা
খেলা
5,864 Views