বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। এর পর থেকে খুঁড়িয়ে চলেছে এর কার্যক্রম। তবে হঠাৎ শিক্ষার্থীশূন্য হওয়ায় ২০২২ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর চালু হয়নি। তিন বছর ধরে বন্ধ থাকা এই বিদ্যালয়ের নাম পাকনিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি অবস্থিত বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায়।
২০২২ বছরের মাঝামাঝিতে এলাকাটিতে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তৎপরতার মুখে স্কুলটি বন্ধ হয়ে পড়ে। পরের বছর জানুয়ারিতে একই উপজেলার চৈক্ষ্যংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও একই ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। যদিও এর অনেক আগেই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শূন্যে নেমে এসেছিল। দুটি স্কুলেই কেএনএফ সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিতেন বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এই দুই বিদ্যালয় যে এলাকায় অবস্থিত, সেটি বম জাতিগোষ্ঠী–অধ্যুষিত। তিন বছর আগে সীমান্তবর্তী এ এলাকায় কেএনএফের তৎপরতা বাড়ায় স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে এলাকা ছাড়েন। এরপর এ দুই বিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বন্ধ হওয়ার আগে পাকনিয়াপাড়া বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ছিল ৩২ জন। আর শিক্ষক ছিলেন পাঁচজন। অন্যদিকে চৈক্ষ্যংপাড়ার বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ছিল ৫৬ জন ও শিক্ষক ছিলেন ৪ জন। দুটি পাড়ায় সব মিলিয়ে ৯৬টি পরিবারের ৪৫০ জন সদস্য বাস করতেন।
বন্ধ হওয়ার আগে পাকনিয়াপাড়া বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ৩২ জন। আর শিক্ষক ছিলেন ৫ জন। অন্যদিকে চৈক্ষ্যংপাড়ার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ৫৬ জন ও শিক্ষক ছিলেন ৪ জন। দুটি পাড়ায় সব মিলিয়ে ৯৬টি পরিবারের ৪৫০ জন সদস্য বাস করতেন।
উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কেএনএফের তৎপরতার কারণে রুমার বম–অধ্যুষিত এলাকায় আরও ১১টি বিদ্যালয় নিরাপত্তার কারণে বন্ধ হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর এসব বিদ্যালয় আবার চালু করা হয়। তবে ওই ৯টি বিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কমেছে। বম জাতিগোষ্ঠীর অনেক পরিবার এলাকায় ফিরে না আসায় শিক্ষার্থী কমেছে বলে জানান শিক্ষা কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা জানান, পাকনিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চৈক্ষ্যংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালুর বিষয়ে ৮ সেপ্টেম্বর রুমা উপজেলার শিক্ষা কার্যালয় থেকে বান্দরবান জেলা কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী পাকনিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলো কেএনএফের সদস্যরা প্রশিক্ষণকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। এ কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে ভয়ে পাড়া ত্যাগ করে সীমান্তের ওপারে চলে যান। পার্শ্ববর্তী চৈক্ষ্যংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাসিন্দারাও সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন। পাড়া দুটি প্রায় তিন বছর ধরে জনশূন্য।
উদ্ধৃতি: বিদ্যালয় দুটি চালু করার জন্য প্রথমেই পাড়াবাসীকে ফিরিয়ে আনা দরকার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। আপাতত তাঁদের ফিরে আসার অপেক্ষা করা ছাড়া করার কিছু নেই।—মো. মোফাজ্জল হোসেন খান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ চিরান বলেন, ‘দুই বিদ্যালয়ের ৯ জন শিক্ষককে উপজেলার অন্য বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। জেলা কার্যালয়ে এ বিদ্যালয়ের বিষয়ে চিঠি পাঠালেও কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, ‘বিদ্যালয় দুটি চালু করার জন্য প্রথমেই পাড়াবাসীকে ফিরিয়ে আনা দরকার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। আপাতত তাঁদের ফিরে আসার অপেক্ষা করা ছাড়া করার কিছু নেই।’
২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি ও রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় কেএনএফ সক্রিয় হয়। সংগঠনটির বিরুদ্ধে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার (যার বাংলা অর্থ: পূর্ববর্তী হিন্দের সাহায্যকারী দল) সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর গত বছর এপ্রিলে রুমা ও থানচি উপজেলায় দুই ব্যাংক ডাকাতি এবং পুলিশ-আনসারের অস্ত্র লুট করেন কেএনএফ সদস্যরা। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।