এলডিসি উত্তরণের পর পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে নিজস্ব প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা সরকার একাই সব পারবে না।
দেশের বেসরকারি উদ্যোক্তারা বলছেন, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তোর ঘটবে। কিন্তু তাদের কোন প্রস্তুতিই নেই। এছাড়া পোশাক খাতে ভয়াবহ রকমের নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। এটি নারীর ক্ষমতায়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে ভবিষ্যতে টেকসই অর্থনীতির জন্য শুধূ পোশাক খাত নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যান্য রপ্তানীমুখী শিল্পের ক্ষেত্রেও পোশাক খাতের মতো সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার, যাতে রপ্তানি বহুমুখীকরণ হয়।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রুশিদান ইসলাম রহমানের লেখা ‘শিল্পায়ন ও রপ্তানিভিত্তিক পোশাকশিল্প’ নামের বইয়ের প্রকাশনা উপলক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
রাজধানীর আগারগাঁও এ বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে অতিথি ছিলেন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য সচিব ড. মনজুর হোসেন এবং পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার।
আলোচক ছিলেন- বিআইডিএসের রিসার্স ফেলো সিবান শাহানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. রুবাইয়া মোরশেদ এবং ড. এম আসাদুজ্জামান।
বক্তব্য দেন, বইটির লেখক রুশিদান ইসলাম, ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল, ড. মোহাম্মদ ইউনূস প্রমুখ। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন- বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. এ. কে. এনামুল হক।
রুশিদান ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার সময়ে জাতির সামনে উন্নয়নের যে রুপরেখা ছিল তাতে স্বাধীনতার অব্যবহিত পূর্বকালে বাইশ পরিবারের হাতে শিল্প সম্পদ কুক্ষিগত ছিল। তা থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্খা ছিল মানুষের মধ্যে। স্বাধীনতাকামী জনগণের প্রত্যাশা ছিল অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন। কিন্তু সেটার পরিবর্তে শিল্প সম্পদ আবারো এদেশের কিছু বৃহৎ উদ্যোক্তাদের হাতে কুক্ষিগত হয়। ফলে বেকারত্বের হার বাড়তে থাকে। কর্ম নিয়োজন ও মূল্যসংযোজনে অংশ বাড়ছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর। অন্যদিকে অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবদান কমছে।
ড. মনজুর হোসেন বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর শুধু পোশাক খাতই নয় সামগ্রিকভাবে সব শিল্পই চ্যালেঞ্জে পড়বে। এজন্য সরকার ইতোমধ্যেই ৩টি কমিটি গঠন করেছে। সরকার প্রণোদনা থেকে বেরিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ করার চেষ্টা চলছে। সেটি কঠিন কাজ। তবুও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আমাদের নেগোশিয়েশনের দক্ষতার অভাব রয়েছে। জাপানের জেট্রোর মতো বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে কিছু করা যায় কিনা সে প্রচেষ্টা চলছে। তবে সরকার সব কিছুই করবে না। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেসরকারি খাতকে কিছু করতেই হবে। আমরা সাধারণত নিজেরাই নিজেদের পরিবর্তনের কাজ করি না। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ড. জাইদী সাত্তার বলেন, আমাদের রাষ্ট্রীয় পলিসির কারণেই রপ্তানি নিরুৎসাহিত হচ্ছে। কেননা দেশীয় শিল্পগুলো যে পণ্য উৎপাদন করে তার সামান্য রপ্তানি হলেও বেশিরভাগ দেশেই বিক্রি করে। এতে তারা রপ্তানির চেয়ে বেশি লাভবান হন। ফলে রপ্তানিতে নিরুৎসাহ হচ্ছে। এটা এন্টি এক্সপোর্ট বায়ার্স রয়েছে।
বক্তারা বলেন, দেশের শিল্প খাত বৈষম্য বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। এদিকে শিল্পে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। টেকসই অর্থনীতির জন্য শুধু পোশাক খাতের উপর নির্ভনর করে থাকলে চলবে না। এদিকে মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অংশ ২০১১ সালে ছিল ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে ২০১৮ সালে এসে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ কমে গিয়ে অবদান হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া বৃহৎ শিল্প ইউনিটগুলোর অবদান ২০১১ সালে ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে হয়েছে ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ।
২০১৮ সালের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে দেখা যায়, ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র শিল্পে গড়ে জনপ্রতি স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ যথাক্রমে ৩ লাখ ২২ হাজার এবং ৩ লাখ ৪০ হাজারের মধ্যে। পাশাপাশি মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পে তা ছিল ৬ লাখ ১৪ হাজার থেকে ৫ লাখ ৭৪ হাজারের মধ্যে। বইটি বাংলায় লেখায় লেখককে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।