রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং মার্কিন পণ্যের বাজারে অযৌক্তিক শুল্ক আরোপের জেরে এবার ভারতের বিরুদ্ধে নতুন করে কঠোর অবস্থান নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ভারতের অর্থনীতিকে সরাসরি “ডেড ইকোনমি” বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে তিনি কিছু বলতে চান না, তবে দুই দেশকেই তিনি পতনের পথে মনে করছেন।
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ভারতের সব রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে তার প্রশাসন। পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার কারণে ভারতের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নেরই অংশ, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অর্থনৈতিক কৌশলের ওপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে।
ট্রাম্পের অভিযোগ, ভারতের শুল্ক হার বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ। এতে মার্কিন ব্যবসায়ীরা ভারতের বাজারে প্রবেশে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অযৌক্তিক নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার এবং আমদানি নিয়মে অস্পষ্টতা—এসবকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুব্ধ ছিলেন ট্রাম্প, এবার তিনি কার্যকর সিদ্ধান্তে গেলেন।
বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারত যেভাবে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে গেছে, তা মার্কিন প্রশাসনের জন্য এক বড় কূটনৈতিক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যে জড়িত দেশগুলোর বিরুদ্ধে তার প্রশাসন কঠোর অবস্থান নেবে—এবং ভারতই প্রথম দেশ, যাকে এই নিষেধাজ্ঞা-ভিত্তিক পদক্ষেপের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
উল্টো দিকে, ভারত তার অবস্থান থেকে সরতে নারাজ। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা তাদের জাতীয় স্বার্থ ও কৌশলগত স্বাধিকার বজায় রাখবে এবং কোনো বাহ্যিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।
তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। শুধু বাণিজ্য নয়, কৌশলগত সহযোগিতা ও আস্থার জায়গাতেও এই পদক্ষেপ আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিক্রিয়া দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের।