বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন, বিএফডিসির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মাসুমা রহমান তানি। সম্প্রতি একান্ত সাক্ষাতকারে তুলে ধরেন এফডিসি নিয়ে চলমান কাজ ও পরিকল্পনার কথা।
‘এফডিসির এমডি হিসেবে আপনার আগে অনেকেই এসেছেন। তারাও আপনার মত অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আপনি কি পারবেন এফডিসির উন্নয়ন করতে?’ এই প্রশ্নে জবাবে মাসুমা রহমান তানি বলেন, এটার সাথে আমার ব্যক্তি স্বার্থ জড়িত। কারণ চেয়ারের ওপাশে আমি একজন নির্মাতা। একজন নির্মাতার যা কিছু দরকার তা কিন্তু এফডিসির সরবরাহ করার কথা। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান তা তো করতে পারছে না। তাই এই জিনিসগুলো করা আমার নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থেই দরকার।
আরও বলেন, আরেকটা বিষয়- যে কোন দেশ ও জাতীর সত্যিকার কালচারাল ন্যারেটিভ বিশ্বের কাছে পৌছে দেয়ার ক্ষেত্রে এফডিসির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই আমাদের দেশের সঠিক কালচারাল ন্যারেটিভ দাঁড় করাতে হলে বা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে হলে- এক্ষেত্রে চলচ্চিত্র অনেক বড় মাধ্যম। তাই আমার সাধ্যের বাইরে গিয়ে হলেও কাজগুলো আমি করতে চাই। এক্ষেত্রে আপনাদের সকলের সহযোগিতা চাই।
‘এফডিসি এবং কবীরপুর ফিল্ম সিটির উন্নয়নে অর্থের যোগান কীভাবে হবে- এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া কাজের অভাবে কলাকুশলীরা রাজনীতির দিকে ঝুঁকছে। এমন পরিস্থিতি থেকে কিভাবে উত্তরণ সম্ভব’- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজ নাই এটা আসলে ঠিক না। এতক্ষণ আপনাদের সাথে কথা হলো-সেখানে কিন্তু উঠে এসেছে যে, কাজ আছে। কাজ হচ্ছেও। আপনি সিনেমা হলে দেখেন, আজকেরও কোন টিকিট আছে কি-না? পাওয়া যাচ্ছে না কিন্তু । তার মানে কাজ হচ্ছে। শুরু হয়েছে। অসংখ্য ফিল্ম হওয়ার কথা। কম বাজেটে অনেক ভাল ভাল কাজ হওয়ার কথা। যদি আমরা নির্মাতাদের প্রপার সেবা দিতে পারতাম। আমরা তো তা দিতে পারছি না। কারণ আমাদের রিসোর্সগুলো নাই।
আরও বলেন, আমাদের যে রিসোর্স আছে বা আমি যে প্ল্যান করেছি- তা কিন্তু শত শত কোটি টাকার না। এই দেশে শত শত কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এটা ছোট বাজেটের। রেভিনিউ বাজেট যেটাকে বলে- ৫০ কোটিরও নীচে। এই টাকার ভেতরে এটা হয়ে যাবে। কারণ এটা কেউ কাজ করতে এসেছে তার বাজেট না। এটা একজন ফিল্ম মেকারের প্ল্যান। আমি বাস্তবটা চিন্তা করে- অল্প সময়ে, ওনাদের ট্যাক্স ধরে, যে বাজেট করা হয়েছে তার সাথে মিনিমাম ট্যাক্স ধরে ওটা রেডি করেছি। যদি এটা পেয়ে যাই- তাহলে খুব বড় বাজেট লাগে না। ছোট ফান্ডেই হয়ে যায়। যদিও সরকারের ওপরে এখন অনেক চাপ। তবে আমরা আশা করি এটা পাবো এবং এর মধ্যেই করে ফেলবো।
‘সামগ্রিক সংস্কৃতির জাতীয় বাজেটই তো নগণ্য। সেখানে চলচ্চিত্রের জন্যে যে বাজেট- তাতে কি ভাল কিছু করা সম্ভব? সংস্কৃতিতে জাতীয় বাজেটের বরাদ্দ বাড়নো দরকার কী?’ এই প্রশ্নের উত্তরে মাসুমা রহমান তানি বলেন, আমাদের চাইতে হবে- বলতে হবে, আপনাদেরকেও বলতে হবে। আমাদের চলচ্চিত্র তা তো শুধু আমাদের একার দায়িত্ব না। এই যে এটা নাই। ওটা নাই। স্টাফদের বেতন নাই, বোনাস নাই। তা শুধু আমাকে কেন বলতে হবে। এখানে তো আপনাদেরও দায়বদ্ধতা আছে। আমি যেমন বলি- আপনারাও তো এটার স্টেকহোল্ডার। আপনাদের অধিকার আছে। ওই অধিকার থেকেই আপনাদের সাথে কথা বলি। আপনাদেরকে আসতে বলি। এই অধিকারের জায়গা থেকে আপনাদের প্রতি আমার অভিযোগেরও অধিকার আছে। ওনাদের জানার তো কথা আপনাদের মাধ্যমে-তাই না?
‘আমরা তো সরাসরি সরকারের প্রতিনিধি না। কিন্তু আপনি তো সরাসরি সরকারের প্রতিনিধি?’ এর জবাবে তিনি বলেন, সরকারের প্রতিনিধি না। আপনারা তো মানুষের সমস্যা পৌছে দেন সরকারের কাছে। সরকার তো অনেক কিছু জানতেই পারে আপনাদের মাধ্যমে। তাই আপনাদের তো বলতে হবে?
‘সাংবাদিকরা চলচ্চিত্রের সংকটের খবর সবসময়ই দেয়। আর ভেতরের এই অবস্থার কথা সরকারসহ সবাই জানে?’ এবার এফডিসির এমডি বলেন, সরকার জানে, তিনি আমাকে দিচ্ছে না- এটা বলে তো লাভ নাই। এটা আমাদের পক্ষে আপনাদেরও তো বলতে হবে। তারা অতটা নিষ্ঠুর না। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন- প্রতিটি সেক্টরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে। ওনারা যে টাকাটা দিয়েছেন তা তো আমাকে দেননি। তা এই প্রতিষ্ঠানকেই দিয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই মানুষ তাদেরও ভালবাসা আছে এই চলচ্চিত্রের ওপরে। কিন্তু তাদের কাছে গিয়ে জিনিসগুলো তো ওইভাবে উপস্থাপন করতে হবে। আমরা করি নাই- তাই হয় নাই। এখন করছি তাই তারাও আমাদেরকে এখন হেল্প করছেন। আশা করি তাদের এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
এই সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সহযোগিতা নেয়ার প্রসঙ্গে মাসুমা রহমান তানি বলেন, নেয়া যায়- ইনফ্যাক্ট আমরা নেবো। আমি আপাতত যে ব্যস্ততার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। কারণ আমাদের যে কমিটির কথা বললাম- সব কিছু এক সাথে করে, তাছাড়া আমি যখন টেবিলের ওপারেও ছিলাম তখন আমরা কয়েকজন যারা সিনেমা ভালবাসি- তারা সবাই এই সরকার আসার পর থেকেই প্ল্যান করছিলাম, এই রকম কিছু করা যায় কি-না, যোগাযোগ করছিলাম। আর এখন তো এখানে আছি। তাই আমার জন্যে যোগাযোগ করা অনেক সহজ। আপাতত এই সংস্কারগুলো নিয়ে আমি ব্যস্ত আছি। আমাদের যে কমিটি সেটাও হয়ে যাবে। সবকিছু মিলে ছুটির পরে আমি চেষ্টা করবো-তাদের সাথে বসে এই বিষয়গুলো সমাধানের।
‘আপনারা দায়িত্ব পান খুব অল্প সময়ের জন্যে, তাই উন্নয়ন করা খুব একটা সম্ভব হয় না। আপনি কি পর্যাপ্ত সময় পাবেন?’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার চুক্তি হয়েছে তিন বছরের জন্যে। আমার মনে হয় যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে। এখানকার যে প্ল্যানটা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম- মর্ডানাইজেশন এবং রিসোর্স ঠিকঠাক করার- তা খুব অল্প সময়েই সম্ভব। আর আমি চেষ্টা করবো- আমাদের যে মেগা প্রজেক্ট চলছে এটা ঠিক করার। কবীরপুরের কাজও এগিয়ে নিবো, যতোটা সম্ভব হয়। আমি চেষ্টা করবো আমার ব্যক্তিগত স্বার্থ থেকেই। ফিল্মমেকার হিসেবে যখন ওপাশে চলে যাব- তখন যেন আমি সবটুকু পাই। বাদবাকী আল্লাহ জানেন।
নিজের ফার্স্ট প্রায়োরিটি সম্পর্কে মাসুমা রহমান তানি বলেন, ‘ফার্স্ট প্রায়োরিটি এখানকার রিসোর্স ঠিকঠাক করা। মেগা প্রজেক্ট যেটা এবং কবীরপুর নিয়ে প্রত্যেকটাই আমার প্রায়োরিটি। কিন্তু আপাতত মর্ডানাইজেশন। কারণ যারা নতুন কাজ করতে আসবে- তাদের জন্যে এফডিসি যেনো সিনেমা বান্ধব হয়।