ইঞ্জি: মোহাম্মদ আলী, আজনিউজ২৪: ‘লড়কে ল্যাঙ্গে পাকিস্তান’ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম হল। আমরা যে পাকিস্তান চেয়েছিলাম, ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবে শের-এ-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক যে পাকিস্তানের কথা বলেছিলেন তা ছিল হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা একটা State হবে আর মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে States হবে। অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তান হবে একটা State এবং আমাদের পূর্ব পাকিস্তান হবে একটি পূর্ণ স্বাধীন State। কথাটি ছিল ‘States’ কিন্তু জিন্নাহ সাহেব ১৪ আগষ্ট ১৯৪৭ সালে যখন পাকিস্তানের প্রক্লেমেশন দেন তিনি চাতুরতা করে ‘States শব্দটি হতে S বাদ দিলেন। ফলে আমরা পাকিস্তানের একটা অংশ হয়ে গেলাম।
এক বছর যেতে না যেতেই ৪৭ এর ডিসেম্বরে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বাঙ্গালী জাতি বুঝতে পারলো আমরা তো পশ্চিম পাকিস্তানের করদ রাজ্যে পরিনত হলাম। বঙ্গবন্ধু কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ঢাকায় ফিরে এলেন। ৪৮ এর ৪ঠা জানুয়ারী ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার নেতৃবৃন্দ যথা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগিশ, খয়রাত হোসেন, আনোয়ারা খাতুন, আরিফ চৌধূরী, টাঙ্গাইলের সামসুল হক প্রমুখদের নিয়ে একটি প্রগতিশীল দল গঠনের ধারাবাহিকতায় সরকার বিরোধী আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠন করেন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ এর ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে হরতালের পিকেটিং করতে গিয়ে গ্রেফতার হন। জেলখানা থেকে চিরকুট পাঠালেন যে ফেব্রুয়ারীর ২১ তারিখ পূর্ব পাকিস্তান এসেম্বলী বসবে (বর্তমান জগন্নাথ হলে এসেম্বলী হাউজ ছিল)। ঐ দিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে এসেম্বলী ঘেরাও এর মাধ্যমে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবী জানাতে হবে। বায়ান্নর ২১ শে ফেব্রুয়ারী তারিখটি বঙ্গবন্ধুই নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। ৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে বঙ্গবন্ধুই বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাস্তবায়ন করেছেন।
২১ শে ফেব্রুয়ারী আজ শুধু বাঙ্গালী জাতির নয়। বিশ্বের ১৯৮ কোটি মানুষের মার্তৃভাষা দিবস। ২১ শে ফেব্রæয়ারীর মাধ্যমে আমরা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ও আমাদের জাতি সত্ত¡া প্রতিষ্ঠিত করেছি।
২১ এর ধারাবাহিকতায় ৫৪ এর নির্বাচন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ৬-দফা স্বাধীকার আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান এবং ৭০ এর সাধারণ নির্বাচন। এই আন্দোলন এবং নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সমগ্র বাঙ্গালী জাতিকে স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার এবং ঐক্যবদ্ধ করেছেন বঙ্গবন্ধু।
এটাই সত্য এবং বাস্তব যে ২১ না হলে ৫৪ এর বিজয় হতো না, ৬৬ এর ৬-দফা প্রস্তাব না দিলে ৬৯ এ ১১ দফা ছাত্র আন্দোলন তথা গণ অভ্যূথান হতো না, আর ৬৯ এর গণ অভ্যূত্থান না হলে ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের একক বিজয় আসতো না এবং ২৫ শে মার্চ কালো রাতে জাতির জনকের স্বাধীনতা ঘোষনা বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহন যোগ্য হতো না।
বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালী জাতি সত্ত্বার জনক, ধারক ও বাহক। তিনি বাংলার মানুষকে হৃদয় থেকে ভালবাসতেন। সব বাঙ্গালী তার আপনজন। তিনি সৃজনশীল, উদ্দোগী এবং স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন বলেই তাঁর হিসেব থেকে কোন কিছুই বাদ পরে নাই। মাত্র সাড়ে তিন বছর শাসন আমল। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়া, সংবিধান প্রনয়ন, দেশ পরিচালনায় সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূনর্গঠন করা থেকে শুরু করে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত, জাতীয় ভাষা, জাতীয় দিবস, জাতীয় ফুল, জাতীয় ফল, জাতীয় পাখী এমনকি জাতীয় কবি ও নির্ধারণ করেছেন তিনি।
আজ বিশ্ব বিবেকের কাছে স্বীকৃত। দেশে দেশে যুগে যুগে নেতা অনেকেই জন্মায়। কেউ ইতিহাসের একটি পংতি, কেউ একটি পাতা, কেউবা একটি অধ্যায়। কিন্তু কেউ আবার একটি জাতির সমগ্র ইতিহাস। শেখ মুজিব বাঙ্গালী জাতির সেই সমগ্র ইতিহাস। তিনি হাজার বছরের বঞ্চিত বাঙ্গালীর স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন তার জন্যই ইতিহাসের পাতায় চির স্বরণীয় হয়ে থাকবেন এবং সে জন্যই তিনি জাতির জনক।
সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে শেখ মুজিবের নাম লেলিন, মহাত্মাগান্ধী, লুমুম্বা, মার্টিন লুথার কিং, কাষ্ট্রো ও আলেন্দের নামের সাথে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আজকে বিশ্বের তারকা খেতি লাভ করেছেন। এ খ্যাতি বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে লাভ করেন নি। তার মেধা, তার দূরদর্শিতা, তার সময়মত সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার জন্যই আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের মডেল। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন, শিক্ষার হার শতকরা ৮০%, মানুষের মাথা পিছু আয় ৩৫০ থেকে আজকে ২০০০ ডলার। স্বাস্থ্য সেবা এতো বেশী উন্নয়ন ঘটেছে যে, মানুষের গড় আয়ূ ৫৪-৭০ বছর। বিদ্যুৎ ৩৫০০ থেকে ২৪০০০ মে:ও: এ উৎপন্ন করে ঘরে ঘরে বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে। বিদ্যুৎ পাচ্ছে বলেই যত্রতত্র কল কারখানা স্থাপিত হচ্ছে। আজকাল বিদ্যুতের অভাবে কোন গার্মেন্টস বন্ধ থাকেনা। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের ১৩ কোটি মানুষই মোবাইল ব্যবহার করে থাকে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায় বসেই সারা পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয় রাখতে পারছে। এই হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ। সবই শেখ হাসিনার অবদান। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছেন আমরা সবই পারি। পদ্মা সেতু, ঢাকা শহরে উড়াল সেতু, নির্মীয়মান মেট্রো রেল, চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীর নিচে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল। জঙ্গি দমনে যেখানে পশ্চিমা দেশগুলি ব্যর্থ হচ্ছে সেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জঙ্গি নিশ্চিহ্ন হয়েছে। জাতিসংঘের কাছ থেকে শেখ হাসিনা জঙ্গি দমনে স্বীকৃতি স্বরুপ অনেক পুরস্কৃত হয়েছেন। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে আজকে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে উপনীত। ইতিমধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হয়েছে এবং জাতির জনকের প্রত্যাশিত সোনার বাংলা গড়ার কারিগর শেখ হাসিনা রূপকল্প ২০২১ ঘোষনা করেছেন। অবশ্যই ২০২১ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হবে। সারা জাতি আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তী, জাতির জনকের জন্মশত বার্ষিকী পালন করছে।
সকল বাধা বিপত্তি, চক্রান্তকে প্রতিহত করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রুপান্তরিত করাই হবে আমাদের একুশের অঙ্গীকার।
(ইঞ্জি: মোহাম্মদ আলী)
চেয়ারম্যান, টাস্কফোর্স অন পাওয়ার এন্ড এনার্জী সেক্টর, আইইবি।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ (১৯৬৫-৬৯)