ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, এইউজেডনিউজ২৪: চীনের উহান শহর থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসে বিপর্যস্থ ইতালি। মারাত্মক আকার ধারণ করা মহামারি করোনাভাইরাসে ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে আতঙ্ক। হতাশায় দিন কাঁটাচ্ছে ইতালির ছয় কোটি মানুষ। জনগণকে সুরক্ষা দিতে ইতালি সরকার করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এদিকে লকডাউনের মেয়াদ তৃতীয় দফায় বাড়িয়ে ৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই সাথে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে খুলে দেয়া হবে বইয়ের দোকান, শিশুসামগ্রী সরবরাহকারী, কাঠ কোম্পানিগুলোর মত পন্যের দোকান । শনিবার (১১এপ্রিল) মৃত্যুর মিছিলে এক বাংলাদেশি সহ যোগ হলো আরো ৬১৯ জন। মিলানে মানিক মিয়া( ৪১ বছর)নামে এক বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় নিগোয়ারদা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। তাঁর দেশের বাড়ি বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলায়।তিনি দীর্ঘদিন হাসপাতালের চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তাঁর এই মৃত্যুতে মিলান শহরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ নিয়ে ইতালিতে মোট আট জন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে প্রান হারালো। শুক্রবার এ সংখ্যা ছিলো ৫৭০ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৯হাজার ৪৬৮জন।এদিন নতুন আক্রান্ত ৪ হাজার ৬৯৪জন। দেশটিতে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। গুরুতর অসুস্থ রোগির সংখ্যা ৩ হাজার ৩৮১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ২ হাজার ৭৯ জন। চিকিৎসাধীন এক লক্ষ ২৬৯জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৫২হাজার ২৭১জন বলে জানিয়েছেন নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেল্লি।
তিনি বলেন, জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকার করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে এ পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩২হাজার ৫৪৩জন।
ইতালির ২১ অঞ্চলের মধ্যে লোম্বারদিয়ায় করোনার সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত (মিলান, বেরগামো, ব্রেসিয়া, ক্রেমনাসহ) ১১টি প্রদেশ। আজ এ অঞ্চলে মারা গেছে ২৭৩ জন। শুধু এ অঞ্চলেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দশ হাজার ৫১১জনে দাঁড়িয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৭হাজার ৫৯২জন। আজ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫৪৪ জন । আজ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৫৪৩ জন।মোট সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৬ হাজার ৮২৩ জন। এদিকে লোম্বারদিয়ার প্রসিডেন্ট আত্তিলিয়ো ফোনতানা বলেন,নতুন আইন লোম্বারদিয়ার জন্য কার্যকর হবেনা।
বইয়ের দোকান, শিশুসামগ্রী সরবরাহকারী, কাঠ কোম্পানিগুলোর মত পন্যের দোকান এ অঞ্চলে বন্ধ থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তে গতকাল সন্ধায় জাতীর উদ্দেশ্যে এক ভাষনে বলেন, লকডাউন আগামী ৩ মে পর্যন্ত চলবে।নইলে আমাদের এতদিনের অর্জন বৃথা হয়ে যাবে। তিনি বলেন,আমি দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহ মন্ত্রীদের সাথে আলাপ করেছি।দেশ বর্তমানের চেয়ে যাতে আরো খারাপ পরিস্থিতি দেখতে না হয় তার জন্য সকলের পরামর্শে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হলো। তিনি আরো বলেন দেশের করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি বর্তমানে কিছুটা ভালোর দিকে। এই মুহুর্তে সব কিছু খুলে দিলে পরিস্থিতি আবারও খারাপের দিকে যাবে।তাই আগের মতই দেশজুড়ে ‘জরুরি নয়’ এমন সব ধরনের ব্যবসা বন্ধ থাকবে। এছাড়া বাড়ির বাইরে সবধরনের খেলাধুলা ও ব্যায়াম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভেন্ডিং মেশিনের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুপার মার্কেট, ফার্মেসি, পোস্ট অফিস ও ব্যাংক খোলা থাকবে এবং গণপরিবহনও সচল থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেই সাথে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে নতুন করে বইয়ের দোকান, শিশুসামগ্রী সরবরাহকারী, কাঠ কোম্পানিগুলোর কার্যকমের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তের আহবানে সাড়া দিয়ে দেশের এই দুর্দিনে ৭ হাজার ২২০ জন অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও অ্যাম্বুলেন্স কর্মী স্বাস্থ্যসেবা দিতে করোনা আক্রান্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। শনিবার তিউনিশিয়ার একটি মেডিকেল টিম চিকিৎসকা সামগ্রী নিয়ে ইতালিতে এসেছেন।এছাড়াও করোনায় আক্রান্তদের সহযোগিতায় কাতার,আলবেনিয়া, চীন ,কিউবা এবং রাশিয়া থেকে আগত মেডিকেল টিম ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রান্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।