কাজী আনিসুর রহমান তৈমুর : আকাশ সব কিছুর স্বাক্ষী- জন্ম থেকে মৃত্যু। সময় অল্প, আপনার মনে হবে সেদিনই তো প্রাইমারি স্কুলে কত আনন্দ করেছিলাম। আর এইতো সেদিন মেট্রিক পাস করলাম। কিন্তু পড়াশুনা শেষ করে চাকরি করার পর পেনশনে যাবার সময় হয়ে গেছে। হয়ে গেছেন দাদা, নানা। হয়তো আল্লাহর মেহেরবানিতে ভাল আছেন। কিন্তু কখন যে বেলা কেটে গেল বুজতেই পারলেন না। তাইতো মনে হচ্ছে। আসলে রাত গিয়ে দিন আসে,দিনের পরে রাত। রাত এবং দিন কিন্তু কেউ কাউকে স্পর্শ করতে পারে না একে অপরকে। এ ক্ষমতা আল্লাহ ওদের দেয়নি। আপনি রাত এবং দিন দেখছেন আসলে এটা আপনার জন্যই। কিন্তু পৃথিবীর একটু দুরে তাকালে রাত-দিন বলতে কিছু নেই।
একটি মোমবাতি জালিয়ে একটি স্ট্যান্ডে গ্লোব বা একটি বল বসিয়ে তা ঘুরিয় দেখেন। দেখবেন যে পাশে মোমবাতি আলো পড়ছে সে পাশ আলোকিত কিন্তু গোলাকার বলের মোমবাতির আলোর অপর পাশে বলটির ছায়া পরে অন্ধকার দেখাচ্ছে।এভাবে সুর্যের আলোতে পৃথিবীতে রাত এবং দিন হয়। কিন্তু আপনি যে টেবিলে মোমবাতি এবং বলটি রেখেছেন তার বেশ কিছু দুরে আলো বা অন্ধকারের বিষয়টি গৌন। এখানে বুঝানো হচ্ছে যে পাশে বল বা গ্লোবটা রেখেছেন তার বিপরীত পাশে শুধুই আলো বা দিন। অপর পাশে কোন বাধা না থাকায় কোন ছায়া পড়ছে না,কোন রাত বা দিনের বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আমরা যারা পৃথিবীতে বাস করছি তারাই কেবল রাত দিনের হিসাব করছি। আমাদের দেহ এ পৃথিবীর মাটি দিয়ে তৈরি তাই আমরা রাত দিনের হিসাব করছি। কিন্তু আত্মা আল্লাহর দেয়া বিশেষ নেয়ামত যা এ পৃথিবীতে থাকে না। তাই আমাদের বুঝার পরে মন বলে এই তো সেদিনের কথা অমুক জায়গায় গেলাম, অমুক কাজ করলাম আজ কত দিন হয়ে গেল। যেহেতু আপনার আত্মা বা মন পৃথিবীর তৈরি বস্তু নয় তাই মনের কাছে মনে হয় সেদিনের কথা। এভাবে হঠাৎ কারো দিন ফুরিয়ে যায় এ ভবে। কিন্ত দেহের মুত্যু ঘটে যা পৃথিবীর মাটি দিয়ে তৈরি আর আত্মার কোন মৃত্যু নেই যা আল্লাহর সৃষ্টি তা আবার আল্লাহর কাছে চলে যায় নির্দিষ্ট স্থানে।
দিন ও রাত এটা আসলে পৃথিবীর হিসাব। মহাকালের সময়ের কোন হিসাব নাই। সুর্যের কাছে কিন্তু রাত দিন বলে কিছু নেই তার কাজ আল্লাহর হুকুমে আলো ছড়ানো। এ আলো অনেক গ্রহের কাছে পৌছে আবার কোন গ্রহের কাছে পৌছে না। অতএব রাত এবং দিনের হিসাব শুধু এ পৃথিবীর মানবকুলের জন্যই সে যত দিন এ পৃথিবী থাকবেন। এ রকম সুর্য অনেক আছে মহাকাশে। যেখানে কোন সুর্যের আলো গ্রহের বাধা পায় তার অপর পাশে অন্ধকার দেখায় আর সুর্যের পাশটায় আলোকিত। ধরুন গ্রহের দুরে কিন্তু সব সময় একি রকম। তার কোন দিনও নেই রাতও নেই। আল্লাহ মহান। এত চিন্তার ক্ষমতা আল্লাহ আমাদের দেননি। তাই আসুন আকাশের বিশালতায় নিজেকে কতটুকু ক্ষুদ্র দেখা যায় তা ভেবে আল্লাহর দেয়া বিধান মতে পৃথিবীর এক পলক সময়কে বেশি মুল্য না দিয়ে ; পরকালের অনন্ত সময়ের হিসাবকে মুল্য দিয়ে সঠিক পথে চলি। আপনার মন কিন্তু সঠিক পথেই চলতে চায় কিন্তু পৃথিবীর অশুভ শক্তির কাছে পরাস্থ হয়ে বার বার প্রতিনিয়ত আপনি ভুল করেই চলছেন। মহান আল্লাহ কোরআন পাকে এবং প্রিয় নবী আল্লাহর বন্ধু হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর হাদিস শরিফে আপনি কোন পথে চলবেন তার সব কিছু বলে দিয়েছেন।
এবং শয়তানকে পরাস্থ করার সকল বর্ননা সেখানে রয়েছে। সুতরাং আকাশের দিকে তাকিয়ে, মহাকালের কথা ভেবে দেখুন আপনার দুনিয়াবি সময় খুবই সামান্য আপনি এখানে অতিথী মাত্র। তাই মানুষ হয়ে মানুষকে ঠকিয়ে কাগজের টাকা সুইজ ব্যাংকে রেখে কোন লাভ নেই। যে টাকা দুনিয়াতেই ফেরত পাবেন না, নিজেও ভোগ করতে পারবেন না। তা মানুষ ঠকিয়ে বা জমিয়ে কি লাভ? তা তো মরণের পরে তিল পরিমান আপনার সাথে যাবে না। কোন কাজেও আসবে না বরং তা আপনাকে প্রতিনিয়ত দংশন করবে। তাই বন্ধ করুন মানুষের সম্পদ আত্মসাত করা, সঠিক পথে চলুন। মানুষ হয়ে মানুষের উপকার করুন। আপনি কিন্ত বেঁচে আছেন আল্লাহর দেয়া ঘুমে পানিতে,বাতাসে,আলোতে যা আপনার কেনা লাগে না। দেখেন যদি আপনি দুদিন না ঘুমাতে পারেন, পানি পান করতে না পারেন, অক্সিজেন নিতে না পারেন তবে আপনার অবস্থা কি দাঁড়াবে। যদিও আপনি অল্প সময় নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন। কি হবে তবে দামি গাড়ি,দামি বাড়া,টাকা কড়ি দিয়ে। আপনার জন্মের অনেক আগেই আপনার রিজিক আল্লাহ দিয়ে রেখেছেন পৃথিবীতে। সৎ পথে উপার্জনের কথা আল্লাহ বলে দিয়েছেন। আপনি মানুষ ঠকিয়ে হাজার কোটি টাকা না কামালেও আল্লাহ আপনাকে ঠিকই খাওয়াবেন। তাই আসুন আকাশের গল্প শুনি, মানুষ হয়ে মানুষের ক্ষতি না করে উপকার করি।