বিরাট কোহলির টেস্ট ক্যারিয়ারে যবনিকা পড়ে গেল দিনদুয়েক আগে। বিস্ময়ের জন্ম দিলেও তার এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে ভারতীয় বোর্ড। ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের এ স্তম্ভকে আর দেখা যাবে না সাদা পোশাকে। তিনি বিদায় নিয়েছেন মে মাসে, একই মাসে তারই প্রতিবেশী দেশের এক ব্যাটিং কিংবদন্তি বিদায় জানিয়েছিলেন টেস্ট ক্রিকেটকে, তিনি ইউনিস খান। দুজনের ক্যারিয়ারে দলের ব্যাটিং লাইন আপে তাদের অবস্থান আর শেষের সময়টায় মিল অনেক, তবে তাদের ক্যারিয়ারে মৌলিক পার্থক্য আছে বেশ।
ইউনিস খান পাকিস্তানের হয়ে ২০০০ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন। তিনি ১১৮টি টেস্টে ১০,০৯৯ রান করেন, যা পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তার গড় ছিল ৫২.০৫। ইউনিস ৩৪টি শতক ও ৩৩টি অর্ধশতক করেছিলেন।
বিশ্বের সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের মাটিতে সেঞ্চুরি আছে ইউনিসের। এমন কীর্তি এখনও অনেক কিংবদন্তি ব্যাটার গড়তে পারেননি যা। তার ক্যারিয়ারটা শুরু হয়েছিল সেঞ্চুরি দিয়ে। তার ক্যারিয়ারসেরা ৩১৩ রানের ইনিংসটা এসেছিল অধিনায়ক থাকাকালে, পাকিস্তানের হয়ে কোনো অধিনায়কের সবচেয়ে বড় ইনিংস ছিল এটাই। বদলি হিসেবে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ক্যাচের নজিরও আছে তার দখলেই।
ইউনিসের ক্যারিয়ারের শেষ দিকে বিরাট কোহলির অভিষেক। ভারতের হয়ে ২০১১ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন। তার শেষ টেস্ট ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, তাদেরই মাঠে। কোহলি খেলেছেন ১১৫টি টেস্ট, করেছেন ৮,৯৭০ রান। তার ব্যাটিং গড় ছিল ৪৯.২৯। তিনি করেছেন ২৯টি শতক ও ৩০টি অর্ধশতক।
তবে কোহলির বড় পরিচয় ছিল একজন নেতা হিসেবে। তার নেতৃত্বে ভারত বিদেশের মাটিতে জয় পেতে শুরু করে এবং টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ওঠে, যদিও সে শিরোপাটা জেতা হয়নি কোহলির ভারতের।
ব্যাটিং পরিসংখ্যানের বিচারে ইউনিস খান এগিয়ে। তার রান ও গড়, এমনকি সেরা ইনিংসটাও কোহলির চেয়ে ইউনিসেরই বেশি ভালো। তবে কোহলি দীর্ঘ সময় ভারতীয় ক্রিকেটের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যা তাকে আলাদা উচ্চতায় রেখেছে। ইউনিস খান ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক, বিশেষ করে চাপের মধ্যে। আর কোহলি ছিলেন আগ্রাসী মানসিকতার প্রতিচ্ছবি, মঞ্চটা যখন টেস্ট ক্রিকেটের, তখন তার আগ্রাসনটা ঠিকরে বেরিয়ে আসতো বেশ করে।
অন্যদিকে, ইউনিস ক্যারিয়ারের শেষ দিকে গিয়ে রান করেছেন, যেখানে অনেক ব্যাটারই ঝরে পড়ে গেছেন। কোহলিও ক্যারিয়ারের শেষ কয়েক বছরে বড় ইনিংস পেতে সংগ্রাম করতে হয়েছে। তবে দু’জনেই তাদের দেশের জন্য নির্ভরযোগ্য সৈনিক ছিলেন।
সবশেষে বলা যায়, ইউনিস খান পরিসংখ্যান ও ধৈর্যের দিক থেকে এগিয়ে, আর কোহলি আধুনিক যুগের নেতৃত্ব ও আবেগের মূর্ত প্রতীক। দুইজনই নিজেদের সময়ে কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন, এবং একই মাসে বিদায় নেওয়াটা ইতিহাসে একটি চমৎকার মিল হয়ে থাকল।