যখন নির্বাচনের তারিখ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক চলছিল (এখনো সেই বিতর্কের অবসান হয়েছে বলা যাবে না), তখন নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে না করার পক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছিল যে গত এক বছরে যাঁদের বয়স ১৮ বছরে পূর্ণ হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগ ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে পারবেন না।
বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। এরপর ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না। তাঁদের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
এই প্রেক্ষাপটে গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। আইনের দোহাই দিয়ে যোগ্য কোনো ভোটারকে তালিকার বাইরে রাখা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। সংশোধিত অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকেরা।
বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উল্লিখিত আইন সংশোধনের কথা জানান।
বর্তমানে প্রতিবছর ডিসেম্বরের মধ্যে যাঁদের বয়স ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসে হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। এরপর মার্চে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। আইন সংশোধনের পর নতুন ভোটারদের পরবর্তী বছর তালিকা প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।
নির্বাচন কমিশন দ্বারা ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসার এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে দেড় থেকে দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। সে ক্ষেত্রে চলতি বছর নভেম্বর পর্যন্ত যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁরা ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন।
এখন নির্বাচন কমিশনের প্রধান দায়িত্ব একটি হালনাগাদ নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা। কাজটি খুব সহজ নয়। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটার তালিকা যাচাই–বাছাই করতে উপযুক্ত লোকবল খুঁজে বের করতে হবে। দ্বিতীয়ত, যাঁদের এই দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাঁরা ঠিকমতো পাালন করবেন কি না। অতীতে ভোটার তালিকা নিয়ে অনেক কেলেঙ্কারি হয়েছে। ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র চালু হওয়ার পর ভুয়া ভোটের ঝুঁকি অনেকটা কমে গেছে। তারপরও সমস্যা রয়ে গেছে। দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ জীবিকার জন্য শহরে থাকেন, যদিও তাঁরা নিজেদের ভোটার করতে চান স্থায়ী বাড়ির ঠিকানায়। এ অবস্থায় তাঁরা যাতে গ্রামে গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে পারেন, সে জন্য যৌক্তিক সময় দিতে হবে।
একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করার জন্য নির্বাচন কমিশন, ভোটারের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা জানেন কে কোন এলাকার ভোটার বা ভোটার হওয়ার যোগ্য।
আমাদের প্রত্যাশা, ‘ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়াটি শিগগিরই কার্যকর হবে এবং এরপর ভোটার তালিকা নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কেরও অবসান ঘটবে