২০২৪ সালের বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম। ১৩৩টি দেশের মধ্যে উদ্ভাবনের দিক থেকে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা সায়েন্সের ব্যবহার ও প্রয়োগ সারা বিশ্বের আর্থসামাজিক অবস্থাকে বেশ বদলে দিচ্ছে। বাংলাদেশকেও ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাব হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। এআই, মেশিন লার্নিং ও রোবোটিকসের মতো প্রযুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি বদলে দিতে পারে। আজ শুক্রবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাই-টেক সিটিতে ইএটিএল ইনোভেশন হাবে শুরু হওয়া ডেটা সায়েন্স, এআই ও অ্যাপ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
ইএটিএল ইনোভেশন হাব ও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব স্যালফোর্ড আয়োজিত এ সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে সরাসরি যুক্ত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বৈশ্বিক উদ্ভাবনের তালিকায় বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প খাত ও ব্যবসায়ীসহ সবার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির সুযোগ তৈরি করতে হবে। সবার মধ্যে সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে নতুন সুযোগ বিকাশের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার মান বাড়াতে হবে। আমাদের দেশের শিল্পকারখানায় গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে আগ্রহ অনেক কম। বেসরকারি পর্যায়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ নানা ধরনের প্রযুক্তি যেসব চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে তার বিপরীতে নতুন সম্ভাবনা ও নীতি তৈরির জন্য সম্মেলন অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে নতুন নতুন ধারণাপত্র পাওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, অটোমেশনের কারণে আমাদের শিক্ষা, অর্থনীতি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাতে আমূল সম্ভাবনার সুযোগ রয়েছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ও সেবায় অটোমেশন অনেক সুযোগ তৈরির জন্য কাজ করছে। আমাদের এসব সুযোগ বাড়াতে গবেষণার পাশাপাশি শিল্প খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনের বিভিন্ন ধারণাপত্র সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া ভীষণ প্রয়োজন বলে আমি মনে করছি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ইএটিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান বলেন, বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক। এ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশ বিদেশের গবেষক, বিজ্ঞানী, ডেটা ও এআই নিয়ে কাজ করা পেশাজীবী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির সর্বশেষ উদ্ভাবন সম্পর্কে জানতে পারবেন। সম্মেলনে দেশ–বিদেশের প্রায় দুই শ গবেষক, বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদসহ নীতিনির্ধারকেরা অংশ নিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়, ডালাসের অধ্যাপক লতিফুর খান বলেন, বর্তমানে ডেটার অনেক ব্যবহার বেড়েছে। নানা কাজে ডেটার ব্যবহার বাড়ছে। ডেটা নিয়ে নানা ধরনের কাজ সারা বিশ্বে বাড়ছে। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি নতুন নতুন সুযোগ ডেটা সায়েন্সের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে। সম্মেলনে এআই, ডেটা সায়েন্স, অটোমেশন ও রোবোটিকসসহ নানা বিষয়ে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে ২১৮টি গবেষণাপত্র জমা পড়েছে।
সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমাইন ও তোফায়েল আহমেদ এআই ও স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণাপত্র পোস্টার আকারে সম্মেলন উপস্থাপন করছেন। আল আমাইন বলেন, আমরা মেশিন লার্নিং ও ডেটা সায়েন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের হেপাটাইটিস সি রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করছি। এআইকে কীভাবে আরও স্বাস্থ্য খাতে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায় সেই সব বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এ সম্মেলনে আমাদের মতো অনেক তরুণ অংশ নিচ্ছে। দেশ–বিদেশের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে নানা বিষয়ে জানার সুযোগ পাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক মুখ্য সচিব ও ইএটিএল ইনোভেশন হাবের চেয়ারম্যান মো. আবদুল করিম, গাজীপুর ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, ইউনিভার্সিটি অব স্যালফোর্ডের সিএসই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. সারাই।