ইসলাম ও ধর্ম ডেস্ক, আজনিউজ২৪: সৃষ্টিজগতের সবচেয়ে চরম এক বাস্তবতার নাম মৃত্যু। পৃথিবীর সব প্রাণীকেই এই মৃত্যুভয় তাড়িত করে। মানুষের মধ্যে শুধু প্রকৃত মুমিনরা এর ব্যতিক্রম। প্রভুর পরম সান্নিধ্য অর্জনে মৃত্যুই তাদের জন্য একমাত্র বাধা। তা ছাড়া সুন্দর ও শুভ মৃত্যু আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তাই একজন মুমিনের পরম প্রত্যাশিত বিষয় হলো ইমানের সঙ্গে মৃত্যুর সৌভাগ্য লাভ। আর মুমিনের শেষ পরিণাম কিভাবে শুভ হবে, এর জন্য রয়েছে কার্যকর কিছু উপায় তথা আমল। সৌভাগ্যের মৃত্যুর সেসব আমল ও উপায় অবলম্বন নিয়েই আজকের এই লেখা।
আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন
ঈমান মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। যে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে এবং এর ওপর অবিচল থাকে মৃত্যুর সময় তার কোনো যন্ত্রণা থাকে না; বরং তার শেষ পরিণাম শুভ হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ অতঃপর অবিচল থাকে, (মৃত্যুর সময়) তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। তারাই জান্নাতের অধিকারী! তারা তথায় চিরকাল থাকবে। তারা যে কর্ম করত, এটা তারই প্রতিফল।’ (সুরা : আহকাফ, আয়াত : ১৩-১৪)
সৎ ও ভালো কাজে আত্মনিয়োগ
কোনো মুমিনের শেষ পরিণাম ভালো হওয়ার আলামত হলো, মৃত্যুর আগেই যাবতীয় পাপ থেকে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা এবং সৎকাজ ও আল্লাহর আনুগত্যের তাওফিকপ্রাপ্ত হওয়া। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যদি তাঁর কোনো বান্দার কল্যাণ করার ইচ্ছা করেন তাহলে তাকে কাজ করার তাওফিক প্রদান করেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি কিভাবে তাকে কাজ করার তাওফিক দেন? তিনি বলেন, তিনি সেই বান্দাহকে মৃত্যুবরণের আগে সৎ কাজের সুযোগ দান করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২১৪২)
শেষ কথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’
বিখ্যাত সাহাবি মুআজ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তির শেষ কথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে (অর্থাৎ এই কলেমা পড়তে পড়তে যার মৃত্যু হবে), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২০৩৪)
সুতরাং মৃত্যুযন্ত্রণা লাঘবে অধিক পরিমাণে এই কলেমা পাঠের বিকল্প নেই।
আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ
মুমিনমাত্রই আল্লাহর প্রতি এই সুধারণা পোষণ করবে যে তিনি অবশ্যই মৃত্যুর সময় বান্দার মৃত্যু কষ্ট লাঘব করবেন। কারণ আল্লাহর প্রতি যে যেমন ধারণা করবে আল্লাহ তার সঙ্গে এমন আচরণই করবেন। এক হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণা মোতাবেক আমি (আচরণ করি)। আমি তার সঙ্গে থাকি। (বুখারি, হাদিস : ৭৪০৫)। অন্য হাদিসে জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মৃত্যুর তিন দিন আগে তাঁকে আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে তোমাদের সবাই যেন আল্লাহর প্রতি উত্তম ধারণা পোষণরত অবস্থায় মারা যায়। (মুসলিম, হাদিস : ৭১২১)
নামাজের প্রতি যত্নশীল
যারা ফরজ ও সুন্নত নামাজের প্রতি যত্নশীল হবে মহান আল্লাহ তাদের মৃত্যুযন্ত্রণা সহজ করবেন এবং জান্নাতে তাদের বিশেষ স্থান দেবেন। নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সংরক্ষণ করবে তথা যথাযথভাবে অজু করে যথা সময়ে উত্তমরূপে রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪/২৬৭)
তা ছাড়া সুন্নত নামাজের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সব সময় ১২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করেন। এ সুন্নতগুলো হলো, জোহরের (ফরজের) আগে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত, মাগরিবের (ফরজের) পর দুই রাকাত। এশার (ফরজের) পর দুই রাকাত এবং ফজরের (ফরজের) আগে দুই রাকাত।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪১৪)
পুণ্যের কাজে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা
প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো পুণ্যের কাজ পছন্দ করা। ভালো কাজের প্রচেষ্টা করা। আর পুণ্যের কাজে প্রচেষ্টা মুমিনের মৃত্যুযন্ত্রণা সহজ করে। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ভালো ও পুণ্যের কাজ খারাপ মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে রাখে, গোপনে দান আল্লাহর ক্রোধ ঠাণ্ডা করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বয়স বৃদ্ধি করে। (তাবরানি কাবির, হাদিস : ৮০১৪)
বেশি পরিমাণে মৃত্যুর স্মরণ
মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করার বড় একটি উপকার হচ্ছে, অন্তর থেকে দুনিয়ার আসক্তি দূর হয় এবং পরকালের চিন্তা সৃষ্টি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সব ভোগ-উপভোগ বিনাশকারী মৃত্যুকে তোমরা বেশি বেশি স্মরণ করো। (তিরমিজি, হাদিস ২৩০৭)
কবর জিয়ারতে মৃত্যুর স্মরণ
কবর জিয়ারত মৃত্যু ও আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। অন্তরে কবরের শাস্তির ভয়াবহতা সৃষ্টি করে। ফলে এর দ্বারা অন্যায় থেকে তওবা এবং মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণে সাহায্য করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের এর আগে কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কেননা তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৭১)
মহান আল্লাহ সবাইকে মৃত্যুকালে ঈমানি মৃত্যু দান করুন।