ইসলাম ও ধর্ম ডেস্ক: জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবি : আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ সাহাবির একজন এবং তৃতীয় খলিফা নির্বাচনের জন্য ওমর (রা.) কর্তৃক গঠিত ছয় সদস্যবিশিষ্ট শুরা কমিটির অন্যতম সদস্য। তিনি রাসুল (সা.)-এর ভায়রা। তাঁর এক স্ত্রী উম্মুল মুমিনিন জাইনাব বিনতে জাহাশ (রা.)-এর বোন উম্মে হাবিবা বিনতে জাহাশ (রা.)। ইসলামের প্রথম পর্বে যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন আবদুর রহমান (রা.) তাঁদের একজন।
সামান্য পুঁজিতে সেরা ব্যবসায়ী : আবদুর রহমান (রা.)-এর বন্ধু সাআদ (রা.) নিজ সম্পদের অর্ধেক এবং দুই স্ত্রীর একজনকে তালাক দিয়ে তাঁকে দিয়ে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন। আবদুর রহমান তাতে সম্মত হলেন না; বরং বন্ধুকে মুবারকবাদ জানিয়ে ব্যবসার পথ বেছে নিলেন এবং ক্ষুদ্র পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন। কিছু অর্থ জমা হওয়ার পর বিয়ে করলেন। মহর দিলেন খেজুরের আঁটি সম-ওজন স্বর্ণ। রাসুল (সা.)-এর নির্দেশে কিছুদিন পর অলিমা করলেন।
ধীরে ধীরে তাঁর ব্যবসা সম্প্রসারিত হলো। মক্কার উমাইয়া ইবনে খালফের সঙ্গে একটি ব্যাবসায়িক চুক্তিও সম্প্রাদন করেন। সামান্য ঘি ও পনির কেনাবেচার মাধ্যমে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। কালক্রমে তিনি তত্কালীন মুসলিম উম্মাহর একজন সেরা ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত হন। (আত তাবকাতুল কুবরা; ৩/৯৩; আল-ইসাবাহ ৪/২৯১)
ইসলামের পথে অকাতরে দান : আল্লাহর পথে ও জনকল্যাণে উদারচিত্তে অকাতরে ব্যয় করেছেন। একদা তিনি রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় নিজের সমুদয় সম্পদের অর্ধেক সদকা করেন। এরপর ৪০ হাজার দিনার সদকা করেন। এরপর ৫০০ ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য প্রস্তুত করে দেন। এরপর ৫০০ উট। এ সব তাঁর ব্যবসায় অর্জিত সম্পদ। কথিত আছে, এক দিনেই তিনি ৩০টি দাস আজাদ করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি বদরি সাহাবিদের জন্য জনপ্রতি ৪০০ দিনারের অসিয়ত করে যান। তখন ১০০ বদরি সাহাবি জীবিত ছিলেন। সবাই ৪০০ দিনার করে লাভ করেছেন। (আল-ইসাবাহ ৪/২৯১, ২৯৩ ; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭/১৬৩)
একবার উসমান (রা.)-এর কাছে একখণ্ড জমি বিক্রি করেন। মূল্য বাবদ ৪০ হাজার দিনারের মালিক হন। সব দিনার তিনি সাধারণ অভাবী লোক, বনু জুহরার গরিব-মিসকিন ও উম্মুল মুমিনিনদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। (আত তাবকাতুল কুবরা ৩/৯৮)
বিশাল বাণিজ্য কাফেলা আল্লাহর জন্য ওয়াকফ : একবার তাঁর বিশাল এক বাণিজ্য কাফেলা সাত শ উট বোঝাই করা চানাবুট, আটা ও অন্যান্য মুদিসামগ্রী নিয়ে মদিনায় প্রবেশ করে। বিশাল এই বাণিজ্য কাফেলা মদিনাজুড়ে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ খবর আয়েশা (রা.)-এর কাছে পৌঁছার পর তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আবদুর রহমান হামাগুঁড়ি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবদুর রহমান এ কথা শোনামাত্রই আম্মাজান আয়েশা (রা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, আমি আপনাকে সাক্ষ্য করে বলছি, আমার এ বিশাল বাণিজ্য কাফেলা ও সমস্ত পণ্য এমনকি উট ও তার হাওদাসহ সব কিছুই মহান আল্লাহর জন্য ওয়াকফ করে দিলাম। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭/১৬৪)