বাগদাদ, ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, ২৯ নভেম্বর, ২০১৯ইং এইউজেডনিউজ২৪: ইরাকের বিক্ষোভ দিন দিন রক্তক্ষয়ী রুপ ধারণ করছে। গতকাল বিক্ষোভকারীরাদের দমনে আরও চড়াও হয় নিরপত্তা বাহিনী। তারপর নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ৪৫ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ২৫০ বিক্ষোভকারী। গত অক্টোবরে শুরু হওয়ার বিক্ষোভে এ নিয়ে চার শতাধিক মানুষ নিহত হলো।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী বাগদাদ, নাজাফ ও নাসিরিয়াসহ বিভিন্ন শহরে নিরাপত্তাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের সরাসরি গুলি করলে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। দেশটির চলমান এই বিক্ষোভের সবচেয়ে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন ছিল এটি। গতকালও বিক্ষোভকারীরা একাধিক শহরে বিক্ষোভ করেন।
এর আগে গত বুধবার রাতে নাজাফ শহরে অবস্থিত ইরানে একটি কনস্যুলেট ভবনে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। তারপর গতকাল বৃহস্পতিবার বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নামলেই তাদের লক্ষ্য করে উন্মুক্ত গুলি চালানো শুরু করে নিরাপত্তাবাহিনী।
কনস্যুলেট ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভকারীরা ইরানের পতাকা নামিয়ে তার বদলে ইরাকের পতাকা ঝুলিয়ে দেয়। ইরাকের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইরান সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়েই মূলত বিক্ষোভকারীদের এই ক্ষোভ। তারা ইরানের সংসদ ও রাজনৈতিক দলসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রভাব খাটানোর জন্য ইরানকে দায়ী করছেন স্লোগানে স্লোগানে।
বুধবার রাতে ইরানি কনস্যুলেটে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওগুলোতে বিক্ষোভকারীদের জ্বলন্ত কনস্যুলেটের সামনে স্লোগান দিতে দেখা যায়। ইরাকের বিক্ষোভে এ ঘটনাকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান।
গতকাল বৃহস্পতিবার নাসিরিয়া শহরে বিক্ষোভকারীরা ভোর হওয়ার আগেই একটি সেতু দখলে নেয়। তাদের সরাতে উন্মুক্ত গুলি চালাতে শুরু করে সেনারা। সেখানে নিহত হন ২৯ জন। তারপর বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করে। পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীরা একটি পুলিশ স্টেশনের বাইরে জড়ো হয়।
এছাড়া রাজধানী বাগদাদে টাইগ্রিস নদীর উপর নির্মিত এক সেতুর নিকটে অবস্থান নেন অনেক বিক্ষোভকারী। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বিক্ষোভকারীদের সমাবেশ লক্ষ্য করে উন্মুক্ত গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে নিরাপত্তাবাহিনী। এতে নিহত হন অন্তত ৪ জন। এছাড়া আরেক শহর নাজাফে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন ১২ বিক্ষোভকারী।
বৃহস্পতিবার তীব্র সহিংসতার পর ইরাকের সঙ্গে মেহরান সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। সীমান্তটি কখন খুলে দেয়া হবে এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। মিত্র ইরানের কনস্যেুলেটে হামলার পর তার নিন্দা জানিয়ে কঠোর হস্তে বিক্ষোভ দমনে নামে ইরাক সরকার। ফলে গতকাল দেশটির বিক্ষোভ সর্বাধিক সংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
কর্মসংস্থানের সংকট, নিম্ন-জীবন মান অতির্কিত ব্যায়, সরকারি পরিষেবার দূর্বল মান এবং প্রশাসনে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে রাজধানী বাগদাদসহ দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। এছাড়া সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ইরানের আজ্ঞাবহ অভিযোগ তুলে রাজনীতি থেকে ইরানের প্রভাব দূর করার দাবিও তুলছেন তারা।
সূত্র : জাগো নিউজ