আইন ও আদালত ডেস্ক: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেলের মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালাচ্ছে র্যাব।
এর আগে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক। আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো কোনও অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছেন দুদকের সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব তথ্য জানান।
দুদক সচিব বলেন, ‘ইভ্যালির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানের প্রয়োজনেই তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইভ্যালি নিয়ে অন্যান্য সংস্থাগুলোও কাজ করছে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে অনুসন্ধান চলছে। তবে এখন পর্যন্ত তারা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ করেছে কি না বা কতটুকু করেছে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি।’
দুদক সূত্র জানায়, ইভ্যালির বিষয়ে তাদের কাছে আগে থেকেই কিছু অভিযোগ ছিল। সম্প্রতি ইভ্যালির অনিয়ম ও দায়-দেনা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হলে চলতি বছরের ৪ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুদকে একটি চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়। এর প্রেক্ষিতে ইভ্যালির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীকে প্রধান একটি একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। অনুসন্ধানে নেমেই দুদক ইভ্যালির এমডি ও চেয়ারম্যানের বিদেশগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করার একটি আবেদন করেছিল আদালতে। আদালত এমডি মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আর দায়িত্ব নেবে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এখন থেকে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ই-ভ্যালিসহ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সভায় ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকাসহ বিভিন্ন ই-কমার্সের বিষয় উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে আইন অমান্য করেছে, সুতরাং মিনিস্ট্রি সরাসরি কোনও দায়িত্ব না নেবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রেফার করা হবে। যাতে তারা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হবে বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান।
হাফিজুর রহমান বলেন, ইভ্যালির টাকা কোথায় গেছে, সেটা জানা যায়নি। দুর্নীতি দমন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকও তদন্ত করছে।
ইভ্যালি ইস্যুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আর সময় নিতে চায় না উল্লেখ করে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হবে।’
প্রাথমিকভাবে ইভ্যালি ইস্যুতে আইনি পদক্ষেপে গেলেও পরবর্তীতে ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, বুম বুম, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, কিউ কম, আদিয়ান মার্ট, নেট.কম এবং আলেশা মার্টের বিষয়ে মন্ত্রণালয় একই পদক্ষেপে যাবে উল্লেখ করেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সেলের প্রধান হাফিজুর রহমান।
গ্রাহকের পাওনা উদ্ধারের প্রক্রিয়া বিষয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আইনি পদক্ষেপে যেতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা করতে পারেন। সংক্ষুব্ধরা ফৌজদারি আইনেও যে কোনও থানায় মামলা করতে পারেন। আর মন্ত্রণালয় মামলা করবে কিনা সেটি নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্তের বিষয়।’
ইভ্যালির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘গ্রাহকের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আজ পর্যন্ত পণ্য দেয়নি। মার্চেন্টের পাওনাও তারা পরিশোধ করেনি। তবে তিন দফায় মন্ত্রণালয় ইভ্যালির কাছ থেকে আর্থিক বিবরণী সংক্রান্ত যে তথ্য চেয়েছে, তার জবাব তারা দিয়েছে। কিন্তু ইভ্যালির দেওয়া জবাবে মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে গড়মিল রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশ অনুযায়ী অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে থার্ড পার্টি অডিটর নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান বলেন, থার্ড পার্টি অডিটর নিয়োগের এখতিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। কারণ, মন্ত্রণালয় থেকে সব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন বা ব্যবসায়িক লাইসেন্স নেয়নি। তবে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় সংকটকালে সরকার অনেক কিছুই সিদ্ধান্ত নেয়। সে ক্ষেত্রে লিগ্যাল ফরম্যাট আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনে আদালতের অনুমতি নিয়ে থার্ড পার্টি অডিটর দিয়ে কোম্পানিগুলোর প্রকৃত আর্থিক চিত্র বের করা হবে।