ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) থেকে মো. মামুন হোসাইনঃ পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার খেজুরের রসের ঐতিহ্য। খেজুরগাছ ও শীতের সঙ্গে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। ইন্দুরকানীতে কয়েকবছর আগেও চোখে পড়ত রসের হাড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরাঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য। দাঁ-কাচি, একগাছি রশি, একদন্ড বাঁশ ও মোমরে ঝোলানো লম্বা-গোল আকৃতির বিশেষ পাত্র (ঠুঙ্গি) নিয়ে গাছে উঠতে দেখা যায় না গাছিদের। দেখাযেত, গায়ের পথে-ঘাটে, নদী বা পুকুরপাড়ে, রাস্তার দু’ধারে বা খেতের আল ঘেঁষে শত শত গাছের শীর্ষভাগ বিশেষভাবে কাটতেন গাছিরা। ১৫-১৬টি পাতা রেখে গাছের উপরিভাগের বাকলসহ অপ্রয়োজনীয় অংশ পরিষ্কার করতেন। আড়াআড়ি ভাবে বাঁধা বাশের দন্ডে দাঁড়িয়ে গাছের সাথে কোমরে রশি পেঁচিয়ে ধাড়ালো দাঁ দিয়ে গাছিদের গাছ চাঁছার দারুন দৃশ্য এখন তেমন চোখে পড়ে না। শীতের প্রত্যুষে
কাঁধে ভার চেপে ঝুলন্ত কলস নিয়ে ছেঁড়া স্যান্ডেলে তাদের ছুটতে দেখা যায় না, বর্তমান সময়ে। সকাল হলেই খেজুরের রস নিয়ে
গাছিরা বাড়ি বাড়ি হাকডাক দিতেন। শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলত খেজুর রস কিংবা রসের পাটালি হুড় দিয়ে মজাদার
পিঠা-পুলির আয়োজন। গ্রাম বাংলাদার এমন দৃশ্য আর তেমন চোখে পড়ে না। এর প্রধান কারণ খেজুর গাছ নিধন। দিনে দিনে কমছে
খেজুরের গাছ। আগের মত খেজুরের রস ও গুড় পাওয়া যায় না। পেলেও আগের থেকে ৪/৫ গুন বেশী দাম দিয়ে কিনতে হয়।
কালাইয়া গ্রামের গাছি মোঃ রুস্তুম আলী জানান, খেজুরের গাছ কমে যাওয়ায় তাদের চাহিদাও কমে গেছে। আগে এই খেজুরের গাছ
চেঁছে (কেটে) ভালোভাবে সংসার চালাতেন শীতের মৌসুমে। যা দিয়ে বছরের আরও কয়েকমাসের সংসার খরচ চলে যেত। তিনি আরও জানান, রস বিক্রির মত আগের সেই অবস্থ নেই। কয়েকবছর আগে এক হাড়ি খেজুরের রস বিক্রি করতাম ২০-২৫ টাকা। এখন খেজুর গাছ না থাকায় সে রসের দাম বেড়ে এখন ৮০-৯০ টাকা।
আব্দুল মান্নান জানান, কাঁচা রসের পায়েস খাওয়ার কথা এখনও ভুলতে পারি না। আমাদের পরের প্রজন্মরা তো পুলি-পায়েশ খেতে পায় না। এখন গ্রামে গাছ যেমন কমে গেছে তেমনি কমে গেছে গাছির সংখ্যাও। ফলে প্রকৃতিগত সুস্বাদু সে রস এখন আর তেমন নেই।