একটা আলোর রশ্মিই যদি বিশ্বের ইন্টারনেট বিপ্লবের চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়ায়? কেবল ক্যাবল নয়, না-ইবা উপগ্রহ, বরং এই আলোই হতে চলেছে ভবিষ্যতের সবচেয়ে দ্রুতগতির তথ্য সংযোগের মাধ্যম। আর এই বৈপ্লবিক ধারণার নাম—টারা (Taara)।
টারা হলো গুগলের মূল কোম্পানি অ্যলফাবেট-এর অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান, যারা এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে যা স্টারলিংকের তুলনায় ১০০ গুণ দ্রুতগতির ইন্টারনেট দেবে বলে দাবি করেছে।
টারার প্রযুক্তি: ফাইবার ছাড়াই আলোর গতিতে ইন্টারনেট
আধুনিক ইন্টারনেট প্রযুক্তি মানেই কেবল কিংবা ব্যয়বহুল স্যাটেলাইট সিস্টেম—এমন ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে টারা। তারা এমন এক প্রযুক্তি এনেছে যেখানে আলোর রশ্মির মাধ্যমে সরাসরি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। এর নাম Lightbridge Technology।
কোনো তার টানার প্রয়োজন নেই। বরং দুই স্থানের মধ্যে মাইলের পর মাইল দূরত্ব সরাসরি সংযুক্ত হয় লেজার রশ্মির মাধ্যমে, যেটি ডেটা পাঠায় চোখের পলকে। আফ্রিকার দুটি শহরের মধ্যে এই প্রযুক্তি সফলভাবে ব্যবহার করে ইতোমধ্যে প্রমাণও দিয়েছে টারা।
স্টারলিংক ও ফাইবারের বিকল্প?
বিশ্বে স্টারলিংক যেমন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করে, আবার ফাইবার অপটিক সংযোগ দিতে লাগে বিপুল খরচ ও সময়। সেখানে টারা খুব অল্প সময়ে স্থাপনযোগ্য, খরচও তুলনামূলক কম। এমনকি দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল বা দুর্গম এলাকাতেও এই প্রযুক্তি সহজেই বসানো যায়—যেখানে কেবল বা স্যাটেলাইট পৌঁছানো কঠিন।
প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
যদিও বায়ুমণ্ডলের আবহাওয়া—যেমন কুয়াশা, বৃষ্টি কিংবা ধূলিঝড়—লেজার সংযোগে বিঘ্ন ঘটাতে পারে, তবুও টারা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নানা প্রযুক্তিগত সমাধান নিয়ে এগোচ্ছে। তাঁরা এমন ডিভাইস তৈরি করছে যেগুলো যেকোনো পরিবেশেও নিরবিচারে কাজ করতে পারে।
এছাড়াও টারা কাজ করছে ফোটোনিক চিপ নিয়ে, যা প্রযুক্তিটিকে আরও ছোট আকারে এবং কম খরচে বিভিন্ন দেশের সরকার, এনজিও কিংবা স্থানীয় টেলিকম অপারেটরের কাছে পৌঁছে দিতে সহায়ক হবে।
ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত
টারার দৃষ্টিভঙ্গি হলো—ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে যেন কেউ পিছিয়ে না থাকে। তাদের এই প্রকল্প ইতিমধ্যে বিভিন্ন সরকার, সংস্থা ও উন্নয়ন সংস্থার সাথে যৌথভাবে কাজ করছে। একদিন হয়তো বাংলাদেশেও আলো দিয়ে চালু হবে দ্রুতগতির ইন্টারনেট—তার শুরু হতে পারে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে।