ইনস্টাগ্রামে কিশোর-কিশোরীরা খাবারজনিত মানসিক ব্যাধি-সম্পর্কিত কনটেন্ট তিন গুণ বেশি দেখছে— এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে মেটার নিজস্ব এক গবেষণা প্রতিবেদনে।
মেটার জরিপ অনুযায়ী, যেসব কিশোর-কিশোরী নিজেদের শরীর নিয়ে হতাশ, তারা ইনস্টাগ্রামে শরীরকেন্দ্রিক কনটেন্ট বেশি দেখছে। এসব পোস্টে দেহের নির্দিষ্ট অঙ্গ যেমন— বুক, উরু ও নিতম্বের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
গবেষণায় এমন সব ভয়াবহ কনটেন্টও পাওয়া গেছে, যেগুলোর মধ্যে ছিল অন্তর্বাস পরা অতিমাত্রায় রোগা নারীর ছবি, নিজের গলা কেটে ফেলা এক নারীর ছবি এবং কান্নারত এক চরিত্রের অঙ্কন— যার পাশে লেখা ছিল, ‘আমি কখনোই তুলনীয় নই’ ও ‘সব শেষ করে দাও’। এসব কনটেন্ট এতটাই সংবেদনশীল যে মেটার গবেষকরা সেগুলোতে ‘সেনসেটিভ কনটেন্ট’ লেবেল যুক্ত করতে বাধ্য হন। মেটার পরামর্শক দলও স্বীকার করেছে, ইনস্টাগ্রামে কিশোরদের জন্য এমন কনটেন্ট সীমিত করা জরুরি। তবে এসব ছবি ও ভিডিও প্ল্যাটফর্মের নীতিমালা অনুযায়ী পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়। ফলে নতুন নীতিমালা কার্যকর হলেও কনটেন্টগুলো নিষিদ্ধ না হয়ে কেবল সীমিত প্রদর্শন করা হবে।
মেটার এক মুখপাত্র বলেন, গবেষণার ফলাফল ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতেই আমরা কিশোর ও অভিভাবকদের জন্য অর্থবহ পরিবর্তন আনছি।
গবেষণায় অংশ নেয় ১ হাজার ১৪৯ জন কিশোর-কিশোরী। তাদের মধ্যে ২২৩ জন জানিয়েছে, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করার পর তারা শরীর নিয়ে খারাপ অনুভব করে। এই গ্রুপের ক্ষেত্রে ‘খাদ্যজনিত মানসিক ব্যাধি সম্পর্কিত’ কনটেন্ট ছিল মোট দেখা কনটেন্টের প্রায় ১০.৫ শতাংশ— যেখানে অন্যদের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৩.৩ শতাংশ।
অন্যদিকে, এই দুর্বল ব্যবহারকারীরা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, পীড়া ও নিষ্ঠুরতা, বয়স্ক থিম এবং কষ্টভিত্তিক কনটেন্ট দেখেছে। তাদের দেখা মোট কনটেন্টের ২৭ শতাংশই এসব শ্রেণির, যেখানে অন্য কিশোরদের ক্ষেত্রে হার ছিল মাত্র ১৩.৬ শতাংশ। গবেষকরা অবশ্য স্বীকার করেছেন, এই ফলাফলে কারণ-ফল সম্পর্ক স্পষ্ট নয়। অর্থাৎ যারা নিজেদের শরীর নিয়ে খারাপ বোধ করে, তারা হয়তো এমন কনটেন্ট নিজেরাই বেশি খুঁজে দেখছে।
তবুও শিশু মনোবিজ্ঞানী ও ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে কিশোরদের জন্য কনটেন্ট ফিল্টারিং আরও কঠোর করা জরুরি।
অন্যদিকে মেটা জানিয়েছে, তাদের পুরোনো কনটেন্ট শনাক্তকরণ টুলগুলো ৯৮.৫ শতাংশ ‘সংবেদনশীল’ কনটেন্ট ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির দাবি, নতুন অ্যালগরিদম চালুর পর এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

